অসময়ে বিদেশী জাতের তরমুজ (স্মার্টবয়-২) চাষাবাদ করে প্রথম বছরেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে সিরাজগঞ্জের দুই কৃষক বন্ধু। এক বিঘা জমিতে চাষাবাদে তারা ১ লক্ষ টাকা খরচ করে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন।
সাফল্য পাওয়া দুই বন্ধু হচ্ছে সদর উপজেলার শালুয়াভিটা গ্রামের মো. সেলিম রেজা ও ইউসুফ আলী। তাদের এমন সাফল্য দেখে এলাকার অন্য কৃষকরাও এখন তরমুজ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জানা যায়, দুই বন্ধু বগুড়ায় বেড়াতে গিয়ে এক কৃষকের জমিতে চাষাবাদ ও ইউটিউব দেখে তরমুজ চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হন। পরবর্তীতে তারা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানান। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগীতায় ২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে নিজেদের গ্রামের মাঠে এক বিঘা জমি বাৎসরিক লিজ নেন। সেখানে আধুনিক মালচিং মাচা পদ্ধতিতে এগ্রো-১ কোম্পানির স্মার্টবয়-২ জাতের তরমুজ চাষাবাদ করেন। প্রথম দিকে টানা বৃষ্টিপাতে তরমুজের গাছ নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তারা।
পরবর্তীতে আবহাওয়া ভাল হলে তাদের জমিতে চারাগাছে ছেয়ে যেতে থাকে। ধীরে ধীরে গাছ বড় হলে পুরো জমিতে মাচা দিয়ে দেন। এখন সেই মাচার নিচে সারি সারি ঝুলে আছে হাজার হাজার তরমুজ। ভারী হওয়ায় এগুলো নেট দিয়ে মাচার সাথে বেঁধে দেয়া হয়েছে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই তরমুজ তুলে বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন এই তরমুজ দেখতে স্থানীয় কৃষকসহ দূর দূরান্তের পাইকরা ছুটে আসছেন। তাদের পরামর্শ নিয়ে তারাও চাষাবাদ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
তরমুজ চাষি সেলিম রেজা জানান, তিন হাজার তরমুজ নেট দিয়ে মাচায় বেঁধে দিয়েছেন। আরো প্রায় দেড় হাজার তরমুজ বড় হচ্ছে। এগুলোও বেঁধে দিবো। তাদের জমির প্রতিটি তরমুজ তিন থেকে চার কেজি ওজনের হবে। ইতোমধ্যে পাইকাররা পুরো জমির তরমুজের দাম তিন লাখ টাকার উপর বলেছেন। কিন্তু আমরা নিজেরাই জমি থেকে তুলে বাজারে বিক্রি করবো। বর্তমানে বাজারে ৬০ টাকা কেজি দরে এই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। সে হিসাবে পুরো জমির তরমুজ ৬ লাখ টাকার উপরে বিক্রি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
আরেক কৃষক ইউসুফ আলী জানান, এই চাষাষাবেদ তারা প্রাকৃতিকভাবে তৈরি জৈব এবং কম্পোস্ট সার ব্যবহার করেছেন। এখানে বাড়তি কোনো রাসায়নিক সার ব্যবহার করেননি। এই পুরো চাষাবাদে তাদের প্রায় লাখ টাকা খরচ হয়েছে। খরচ বাদে এখান থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তারা। এর পাশাপাশি তারা আরো ৫ বিঘা জমিতে মালচিং পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, আলু চাষাবাদ শুরু করেছেন। স্বপ্ন দেখছেন এই চাষাবাদের মাধ্যমে নিজেদের স্বাবলম্বী করার।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবীদ আনোয়ার সাদাত জানান, কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে দুই কৃষককে আমরা তরমুজ চাষাবাদে সহায়তা দিয়েছি। তাদের মালচিং পেপার, বীজ, সার, বালাইনাশকসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তাদের পাশে থেকে পুরো চাষাবাদে মাঠ পর্যায়ে সব রকমের সহযোগিতা ও পরামর্শ দিয়েছি। প্রথম বছরেই তারা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছে। ৭০ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে মধ্যে এই ফল তুলে বাজারে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের টাকা লাভ হওয়ায় এদের দেখাদেখি অনেকেই এ চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।