ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ভারতের নাগপুরের এক তরুণী সারা বিশ্বকে দাবার বোর্ডে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন

নাগপুরের দিব্যা দেশমুখ মহিলা দাবা বিশ্বকাপ-২০২৫-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।
  • আপলোড তারিখঃ 13-08-2025 ইং
ভারতের নাগপুরের এক তরুণী সারা বিশ্বকে দাবার বোর্ডে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

উনিশ বছর বয়সে যেখানে অনেকে জীবনের দিক খুঁজে পায় না, সেখানে ভারতের নাগপুরের এক তরুণী সারা বিশ্বকে দাবার বোর্ডে নিজের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নাগপুরের দিব্যা দেশমুখ মহিলা দাবা বিশ্বকাপ-২০২৫-এ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন।


ভারতীয় তরুণী দিব্যা দেশমুখ ভারতের পাশাপাশি সারা বিশ্বে দাবার মাঠে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ সৃষ্টি করছেন। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পাশাপাশি অর্জন করেছেন গ্র্যান্ডমাস্টার (দাবা খেলার একটি সর্বোচ্চ খেতাব) উপাধি। এ সম্মানটি বিশ্বমঞ্চে ভারতীয় মেয়েদের নতুন করে চিনিয়ে দিয়েছে।


২০০৫ সালের ৯ ডিসেম্বর ভারত মহারাষ্ট্রের নাগপুরে মারাঠি পরিবারে দিব্যা দেশমুখ জন্মগ্রহণ করেন। ছোট বেলা থেকেই দিব্যা অসাধারণ বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে শুরু করেন। তার চিকিৎসক বাবা-মা লক্ষ করেন খেলনার বদলে মেয়েটি চুপচাপ বসে চিন্তায় ডুবে থাকে। তারা তাকে দাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, আর তখন থেকেই শুরু হয় এক নতুন গল্পের।


স্কুল শেষে অন্য বাচ্চারা যখন খেলতে বের হয়, দিব্যা বসে থাকতেন দাবার বোর্ড নিয়ে। রাতে যখন ঘুমিয়ে পড়ার কথা, তখন সে ইউটিউবে গ্র্যান্ডমাস্টারদের খেলা বিশ্লেষণ করতেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে দিব্যা প্রথম প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। এরপর একে একে বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা, রাজ্য পর্যায়, জাতীয় পর্যায় পেরিয়ে তিনি পৌঁছে যান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। 


৬৪ ঘরের সিংহাসন জয়ের উজ্জ্বল অধ্যায়

২০২২ সালে তিনি ভারতের তরুণ প্রতিভা হিসেবে পরিচিতি পান। ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে বিশ্ব দাবা ফেডারেশনের র‍্যাংকিংয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করে আলোচনায় আসেন। আর ২০২৫-এর বিশ্বকাপে এসে নিজের মুকুট পরেন। আগস্টে অনুষ্ঠিত FIDE মহিলা দাবা বিশ্বকাপ-২০২৫ ছিল দিব্যার জীবনের সবচেয়ে বড় মঞ্চ।


প্রতিযোগিতায় বিশ্বের সেরা দাবাড়ুদের হারিয়ে তিনি চূড়ান্ত পর্বে ওঠেন। চূড়ান্ত পর্বে দিব্যার প্রতিপক্ষ ছিল ৩৮ বছর বয়সী কোনেরু হাম্পি। ২৮ জুলাই জর্জিয়ার বাতুমিতে টাইব্রেকারে স্বদেশি কোনেরু হাম্পিকে হারিয়ে তিনি গ্র‍্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করে নেন। দিব্যা এখন ভারতের অন্যতম কনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার। তিনি দ্বিতীয় র‌্যাপিড গেম জিতে আবেগে কেঁদে ফেলেন। 


দিব্যার এই অর্জনের পর আনন্দে মেতে ওঠে গোটা জনপদ। স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং দাবা ক্লাবগুলো তাকে উৎসর্গ করে আয়োজন করে বিশেষ অনুষ্ঠান। এয়ারপোর্টে তাকে বিশেষভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ ছাড়া ভারতের প্রধান বিচারপতি ভূষণ FIDE দাবা বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন এবং গ্র্যান্ডমাস্টার দিব্যা দেশমুখকে তার অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন জানাতে নাগপুরে তার বাসভবনে যান।


এই সাফল্যই দিব্যার শেষ লক্ষ্য নয়। তার ইচ্ছা আন্তর্জাতিক দাবা অলিম্পিয়াডে ভারতকে প্রতিনিধিত্ব করা এবং আরও বিশ্বজয়ী পারফরম্যান্স দেওয়া। পাশাপাশি, তিনি গ্রামের মেয়েদের মধ্যে দাবা ছড়িয়ে দিতে চান। এ ছাড়া কীভাবে খেলাটি যুক্তি, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে তা তাদের শেখাতে চান। 


গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দিব্যা জানান, ‘আমার পথচলা সহজ ছিল না। অনেক রাত কেটেছে অনুশীলনে, অনেক ম্যাচে হারতে হয়েছে। কিন্তু একটাই বিশ্বাস ছিল জিতব। এখন আমি চাই, অন্য মেয়েরাও বিশ্বাস করুক নিজেদের ওপর।’


দিব্যা দেশমুখ আমাদের দেখিয়েছেন, একজন তরুণীও বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন প্রতিযোগিতায় জয়ী হতে পারে, যদি তার পাশে থাকে পরিবার, সাহস এবং নিজের প্রতি বিশ্বাস। তার সাফল্য আমাদের মনে করিয়ে দেয় মেয়েরা কেবল ঘরেই নয়, দাবার মতো কৌশলনির্ভর আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পারদর্শী হতে পারে।


দিব্যার গল্প নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে শিখাবে। যারা ভেবে নেয় ‘আমি পারব না’, তাদের কাছে দিব্যার জবাব ‘হ্যাঁ, তুমি পারো!’ ছোট শহরে জন্ম নেওয়া মানে পিছিয়ে পড়া না, লক্ষ্য ঠিক থাকলে তুমি অবশ্যই পারবে। দিব্যা আমাদের অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত, আমাদের নারীদের চলার পথে এক প্রেরণার নাম।


তথ্য সূত্র: আনন্দ বাজার, দ্য হিন্দু


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে