ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে অলংকার ও বস্তু-সামগ্রীর মালিকানা নির্ধারণ

  • আপলোড তারিখঃ 14-08-2025 ইং
ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে অলংকার ও বস্তু-সামগ্রীর মালিকানা নির্ধারণ ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

আমাদের সমাজে এমন দৃশ্য হরহামেশাই দেখা যায় স্বামীরা, বিশেষত যারা বিদেশে থাকেন বা কর্মক্ষেত্রে বাড়ির বাইরে থাকেন, নিয়মিত তাদের স্ত্রীদের কাছে সাংসারিক খরচ বাবদ টাকা পাঠান। অনেক সময় এই টাকা থেকে স্ত্রীরা কিছু কিছু সঞ্চয় করে নিজেদের জন্য অলংকার বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনেন। পরবর্তী সময়ে স্বামী অথবা স্ত্রীর মৃত্যু হলে, এই সঞ্চিত অর্থে কেনা অলংকারাদির মালিকানা নিয়ে ওয়ারিশদের মধ্যে প্রায়শই বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই মূল্যবান জিনিসগুলো কার সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে, তা নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।


ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে এই ধরনের অলংকার ও বস্তু-সামগ্রীর মালিকানা নির্ধারণের জন্য একটি মৌলিক বিষয় স্পষ্ট হওয়া জরুরি। স্বামী তার স্ত্রীকে এই টাকা কী উদ্দেশ্যে দিয়েছেন।


১. স্ত্রীর মালিকানা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়: যদি স্বামী এই মনোভাব নিয়ে টাকা দিয়ে থাকেন যে, স্ত্রীর কাছে এই টাকার কোনো হিসাব চাওয়া হবে না এবং খরচের পর যদি কিছু টাকা বেঁচে যায়, তাহলে সেই সঞ্চয়ের মালিক স্ত্রী নিজেই হবেন। সে ক্ষেত্রে জমানো টাকা দিয়ে কেনা সব সম্পদ বা অলংকারের মালিক স্ত্রীকেই ধরা হবে। এমতাবস্থায়, স্ত্রী যদি মারা যান, তাহলে এই অলংকারগুলো তার ত্যাজ্যসম্পদ হিসেবে গণ্য হবে এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী তার সব ওয়ারিশের (যেমন- সন্তান, বাবা-মা, স্বামী ইত্যাদি) মাঝে ন্যায্য হিস্যা অনুসারে বণ্টন করা হবে।


২. স্বামীর মালিকানা যখন প্রতিষ্ঠিত হয়: অন্যদিকে, যদি স্বামী স্ত্রীর কাছ থেকে পাঠানো টাকার হিসাব নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন এবং খরচের পর অতিরিক্ত টাকা ফেরত চান, তাহলে সেই সঞ্চিত টাকা ও অলংকারের মালিকানা স্বামীর বলেই বিবেচিত হবে। এমন পরিস্থিতিতে, যদি স্বামী মারা যান, তাহলে স্ত্রী সেই অলংকারগুলো এককভাবে কুক্ষিগত করে রাখতে পারবেন না। বরং এই সম্পদগুলো স্বামীর ত্যাজ্যসম্পদ হিসেবে গণ্য হবে এবং তার সব ওয়ারিশের (যেমন সন্তান, বাবা-মা, স্ত্রী ইত্যাদি) মাঝে যথানিয়মে ফারায়েজ অনুযায়ী তা বণ্টন করা হবে। (সূত্র: আদ-দুররুল মুখতার, আলাউদ্দিন আল-হাসকাফি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা: ২০০, এইচ এম সাইদ কর্তৃক প্রকাশিত)।


কীভাবে বিরোধ এড়ানো সম্ভব?

এই ধরনের পারিবারিক বিরোধ এড়াতে সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুরু থেকেই অর্থের উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট বোঝাপড়া থাকা। স্বামী যখন স্ত্রীর কাছে সাংসারিক খরচের জন্য টাকা পাঠান, তখন তার উদ্দেশ্য সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া উচিত তিনি স্ত্রীকে এই অর্থের পূর্ণ মালিকানা দিচ্ছেন নাকি এটি শুধু খরচের জন্য একটি আমানত হিসেবে দিচ্ছেন। লিখিতভাবে বা সাক্ষীর উপস্থিতিতে এই বিষয়টি পরিষ্কার করে রাখলে ভবিষ্যতে অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতা ও পারিবারিক কলহ অনেকাংশে এড়ানো সম্ভব। এটি পরিবারে শান্তি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে