সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় একটি মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং কবরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। কয়েক হাজার মুসল্লি ও মাদরাসা ছাত্ররা এ হামলায় জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ইসমাইল পাগলার মাজারে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে ২৯ আগস্ট সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল মনসুরনগর ইউনিয়নের বামনজানি বাজারের পাশে অবস্থিত আলী পাগলার মাজার ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়া স্থানীয় শালগ্রাম জামে মসজিদের ইমাম গোলাম রব্বানীকে চাকরিচ্যুত করেছে গ্রামবাসী।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সরেজমিন ইসমাইল পাগলার মাজারে গেলে দেখা যায়, মাজারের চারদিকে লোহার রেলিং, থাই গ্লাস ও ইসমাইল পাগলার কবরটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলার আগে কয়েক হাজার মুসল্লি ও মাদরাসা ছাত্ররা স্থানীয় কান্দাপাড়া হাটে জমায়েত হন। সেখান থেকে মিছিল সহকারে গিয়ে তারা মাজারে হামলা করেন।
হামলাকারীরা হাতুড়ি, রড, শাবল ও লাঠিসোঁটা দিয়ে মাজারের বিভিন্ন স্থাপনা করেন। এরপর তারা মাজারের দান বাক্স এবং পাশেই অবস্থিত মাজারের খাদেমের দোকান ভাঙচুর করে টাকা ও মাল লুট করে নিয়ে যান।
প্রত্যক্ষদর্শী শামসুল ইসলাম বলেন, মাজারটিতে হামলা হবে আগে থেকেই জানতে পেরে মঙ্গলবার দুপুরের দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা মাজার এলাকায় এসেছিল। ওই সময় হামলাকারীরা ঘটনাস্থলে না থাকলেও তারা গ্রামবাসীকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে চলে যান।
এরপর বিকেলে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের কয়েক হাজার মুসল্লি ও মাদরাসা ছাত্ররা মিলে হামলা চালিয়ে মাজারে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন।
স্থানীয় সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি বৃহস্পতিবার ইসমাইল পাগলার ভক্তরা মাজারে এসে জিকির-আসগার করত। এখানে অশ্লীল কোনো কার্যক্রম হতো না।
সদর থানার ওসি হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘সংবাদ পেয়ে মাজার ভাঙার আগে এবং পরে সেনাবাহিনী ও আমরা (পুলিশ) ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। মাজার ভাঙার বিষয়ে থানায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইসমাইল পাগলা প্রসঙ্গে তাঁর চাচি সালেহা বেগম বলেন, ‘প্রায় ৪০ বছর আগে ঘুমের মধ্যে কী যেন স্বপ্ন দেখার পর থেকে ইসমাইল উদাসীন হয়ে যা। কিছুদিন পর সে পাগল হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। এর পর থেকে সে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াত। বিভিন্ন কবরস্থানে রাত কাটাত। পাগল হওয়ার পর থেকে ইসমাইল সারা দিনে বেশি কথা বলত না। কারো দেওয়া কোনো কিছু গ্রহণ করত না। কিছু প্রয়োজন হলে নিজেই চেয়ে নিত। তার বাবার অনেক সম্পত্তি থাকলেও তাতে ইসমাইলের কোনো মোহ ছিল না। ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে (বাংলা ২৭ চৈত্র) তার মৃত্যু হয়। রাতের বেলায় ইসমাইলের জানাজা হলেও মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার হাজার হাজার ভক্ত দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছিল। বাড়ির পাশেই নিজস্ব জায়গায় তাকে দাফন করা হয়। এরপর ইসমাইল পাগলার ভক্তরাই এই মাজার তৈরি করেছে। প্রতিবছর মৃত্যুবার্ষিকীতে এখানে বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করে তার ভক্তরা।’