চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়ে পঙ্গু হওয়ার পথে স্থানীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতা। তারা হলেন– শিবগঞ্জ পৌর এলাকার ৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহসভাপতি মেহেদী হাসান দীপু এবং একই ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি সুবেল। স্থানীয় ছাত্রশিবিরের কর্মীদের হামলায় এ পরিণতি হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ।
আহত দুই নেতার স্বজনরা জানান, অর্থের অভাবে যুবদল নেতা ঢাকা থেকে চিকিৎসা না করেই বাড়ি ফিরেছেন। স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার চিকিৎসাও বন্ধ হওয়ার পথে।
শিবগঞ্জ পৌর এলাকার চক দৌলতপুর গ্রামে আহত দীপুর বাড়ি। টিনশেড ঘরের বারান্দার বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন দীপু। তিনি বলেন, গত ১৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় জন্মদিনের দাওয়াতের কথা বলে মনাকষা যেতে বলেন তাঁর বন্ধু মোহাম্মদ আলী। রাত পৌনে ৮টার দিকে তিনি ও সুবেল সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে তাদের ওপর হামলা হয়।
দীপু বলেন, আমরা কালুপুর পাগলা সেতুসংলগ্ন এলাকায় পৌঁছালে শিবিরকর্মী কাবিল একটি পাইপগান দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করলে মাটিতে পড়ে যাই। পরে শিবিরকর্মী সমর, তাসেম, রাজু, মোহাম্মদ আলী ও মিনার দু’জনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
তিনি বলেন, হামলাকারীর মধ্যে মিনার ছাড়া বাকিরা শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে এর আগে এদের কয়েকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিল। হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর তারা আবার শিবিরে যুক্ত হয়। এ সময় কাঁদতে থাকেন দীপু। পাশে থাকা তাঁর মামা শাহিনের উদ্দেশে বলেন, ‘মামা, আমাকে সুস্থ করো। আমি আবার সুস্থ জীবনে ফিরতে চাই।’
দীপুর স্ত্রী সাথীও এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, একদিকে চিকিৎসার খরচ, অন্যদিকে ঋণবাবদ প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার কিস্তি। সামনে রয়েছে আবার অপারেশন। পঙ্গু হাসপাতালের ডাক্তার এ মাসের মাঝামাঝি এক লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেছেন। কীভাবে কী হবে, কিছুই জানি না।
দীপুর বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, অর্থের অভাবে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তির ১২ দিনের মাথায় ২৭ সেপ্টেম্বর বাড়ি নিয়ে আসি। গরু বিক্রি ও এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েও ছেলের চিকিৎসা শেষ করা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে রাজশাহী ও ঢাকায় দু’দফা অপারেশন বাবদ খরচ হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। প্রতিদিন ঢাকায় সব মিলিয়ে খরচ হয় আট হাজার টাকা। তাই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়।
দীপুর ছোট ভাই সুভানের দাবি, হামলাকারী ফয়সালসহ কয়েকজন ঘুরে বেড়ালেও তাদের পুলিশ আটক করছে না। পাশাপাশি মামলায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হলেও যাকে-তাকে আটকের পর এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
হামলায় আহত ৩ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসভাপতি সুবেল আলীর বাবা হাউস আলী জানান, ধারদেনা করে ছেলেকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করে রাখা হয়েছে। চিকিৎসা চলছে। ছেলে আর হাঁটতে পারবে কিনা জানি না।
এ ঘটনায় দায়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শিবগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খাইরুল ইসলাম জানান, আসামি কাবিলকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছিল। আদালত জেলগেটে দু’দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়েছে। বাকি আসামিরা পলাতক। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।
জানতে চাইলে শিবগঞ্জ থানার ওসি গোলাম কিবরিয়া বলেন, প্রকৃত আসামিদের যাচাই-বাছাই করেই এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এবং হবে।
অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় শিবিরের নেতা আল-আমিন জানান, অপরাধী যেই হোক, তাদের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই। হামলার সঙ্গে তাঁর দলের কোনো নেতাকর্মী জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে কালোপুর এলাকায় দীপু ও সুবেলকে এলোপাতাড়ি কোপায় সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় মামলা হয়।