ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিচার শুরু হলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আসিফ নজরুল

  • আপলোড তারিখঃ 19-09-2024 ইং
বিচার শুরু হলেই শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আসিফ নজরুল ছবির ক্যাপশন: ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা পড়ছে, তবে এখনও কোনোটির বিচার শুরু হয়নি।


বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলেই ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে যথাযথ প্রক্রিয়ায় ফেরত চাওয়া হবে বলে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল মন্তব্য করেছেন।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।


প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে ছয় সংস্কার কমিশনের প্রধানদের নিয়ে বৈঠকের পর আলোচনার বিষয়বস্তু অবহিত করতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন আসিফ নজরুল।


প্রবল গণআন্দোলনের মুখে ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখনও সেদেশে আছেন তিনি।


৮ অগাস্ট ক্ষমতা নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। সেই থেকে গত দেড় মাসে শেখ হাসিনার নামে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে অভিযোগের পর অভিযোগ জমা পড়ছে, তবে এখনও কোনোটির বিচার শুরু হয়নি।


সংবাদ সম্মেলনে আসিফ নজরুল বলেন, “আমরা খুব দ্রুত আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনাদের জানাব, ছাত্র-জনতার ‘বিপ্লবকালে’ যে গণহত্যা হয়েছে, যে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে; সেটার বিচারের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করেছি। দৃশ্যমান কিছু অগ্রগতি হয়েছে। তদন্ত দল, প্রসিকিউশন দল গঠন করা হয়ে গেছে, আদালত পুনর্গঠনের চিন্তা চলছে। অচিরেই দেখবেন, বিচার শুরু হয়েছে।”


“বিচার শুরু হওয়ার পর অবশ্যই আমরা (শেখ হাসিনার) প্রত্যর্পণ চাইব।”


আসিফ নজরুল বলেন, “আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী ভারতে যদি কোনো দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি থাকেন, উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোন; আর যাই হোন না কেন, উনার প্রত্যর্পণ আমরা চাইতে পারি।”


তবে কোন স্ট্যাটাসে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা, সে বিষয়ে অবহিত নয় অন্তর্বর্তী সরকার।


১৭ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কীভাবে, কোন ‘ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাসে’ ভারতের অবস্থান করছেন, সে বিষয়ে ‘অফিসিয়ালি কিছু জানে না ঢাকা’।


সেদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “না,আমরা অফিসিয়ালি কিছু জানি না। যেটুকু বলেছিলেন তাদের (ভারতের) পররাষ্ট্রমন্ত্রী, যে ‘উনি এসেছেন, তাকে খুব তাড়াতাড়ি আশ্রয় দিতে হয়েছে’।”


আসিফ নজরুল বলেন, বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে একটি আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে প্রস্তাবিত কমিশন প্রধানদের নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অনলাইনের মাধ্যমে সংযুক্ত হন আলী রিয়াজ। আমরা প্রধানত আলোচনা করেছি সংস্কার ভাবনা নিয়ে।


“সংস্কার কমিশনের কাজের প্রক্রিয়া, কর্মপদ্ধতি, সদস্য বাছাইসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এসব কমিশন পহেলা অক্টোবরের মধ্যে কাজ শুরু করবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।”


সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ধাপের আলোচনা শুরু হবে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ সংস্কার ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এরপর ধাপে ধাপে বৃহৎ আকারে আলোচনা হবে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।


“সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট পাওয়ার পর সেগুলো অনলাইনে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। সবার মতামতকে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করা হবে।”


তিনি বলেন, এটার ভিত্তিতে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের গণ-অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা শুধু নির্বাচনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, সেটা ছিল রাষ্ট্র সংস্কারে প্রশ্ন এবং প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন।


“বাংলাদেশে যাতে আর কোনো দিন ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা জাকিয়ে উঠতে না পারে, সেই আশঙ্কা রোধ করতে কী কী সংস্কার প্রয়োজন; সেই ধরনের চিন্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছিল, সেটার লক্ষ্যে এই সংস্কার কমিশনগুলো প্রাথমিক স্তরে কাজ শুরু করেছে।”


‘আওয়ামী লীগের আলোচনা হবে না’


আসিফ নজরুল বলেন, “সংস্কার বিষয়ে আওয়ামী লীগ ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। যারা গণহত্যা চালিয়েছে, হাজারের ওপর মানুষকে হত্যা করেছে, হাজার হাজার মানুষকে আহত করেছে, যারা বিচারের ভয়ে পালিয়ে আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে না। এটা আমাদের পরিষ্কার বক্তব্য “


সংস্কার কমিশন গঠনের পেছনে যেসব চিন্তা ছিল সেগুলো নিয়ে মাহফুজ আবদুল্লাহ বলেন, সংস্কার কমিশন গঠনের পেছনের উদ্দেশ্যে হল বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘসময় ফ্যাসিবাদী শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ঠ ছিল। এখন একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে জনগণের সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয় যেমন আছে, তেমনি নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে জনগণের সবার সমর্থন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে গঠিত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, বাংলাদেশে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গত ১৫ বছর ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে এবং গত ৫৩ বছর দেখছি যেসব প্রতিষ্ঠান কাজ করতে পারছে না জনগণের স্বার্থে, জনগণের জন্য, সেগুলো ঢেলে সাজানো ।


প্রাথমিকভাবে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে। এই কমিশনগুলো প্রায়োরিটি বেসিসে কাজ করবে। দুর্নীতি, জনপ্রশাসন, বিচার বিভাগ, সংবিধান, নির্বাচন মূলত এই জিনিসগুলোকে গুছিয়ে আনতে পারি; এর পরবর্তীতে আরও অনেকগুলো সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা আমাদের আছে। সেগুলো নিয়ে পরবর্তীতে কাজ এগোবে। সংস্কার কমিশনগুলো আগামী তিন মাসের ভেতরে প্রস্তাবনা সংগ্রহ, কনসালটেশন ডায়ালগের ভেতর দিয়ে একটি প্রস্তাবনা উপস্থাপনা করবে সরকারের কাছে। সেটির ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”


তিনি আরও বলেন, কমিশন স্বাধীন থাকবে এবং পলিটিক্যাল প্রেসার যাতে না থাকে; সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের কার্যপরিধি বিষয়টি আলোচনা হয়েছে; কোন কোন ক্ষেত্রগুলিতে তারা কাজ করবেন এবং কারা কারা এই কমিটিগুলোর সদস্য হিসেবে আসবেন।”


‘মব-জাস্টিস এড়াতে কঠোর অবস্থানে সরকার


মব-জাস্টিসে বা গণপিটুনিতে হত্যার মত ঘটনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, দেশে যে কোনো ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যা, গণপিটুনি বা মব-জাস্টিস বন্ধ করতে হবে। এ ধরনের ঘটনা চলতে দেওয়া হবে না। যারা এসব করবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকারের।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে ‘চোর সন্দেহে’ তোফাজ্জল নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় আসিফ নজরুল বলেন, ‘ঢাবির ঘটনায় মর্মাহত। মব-জাস্টিস এড়াতে যত রকম পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, নেওয়া হবে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সহ্য করা হবে না। এর সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ, আওয়ামী সমর্থকদের খুশির কী কারণ ?