জয়পুরহাটের কালাইয়ে সড়কের পাশ থেকে সামাজিক বনায়নের ১ হাজার ২৬৫টি গাছ বিক্রি করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মৌখিক নির্দেশে তেলিহার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাছগুলো বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন সদস্যরা। গাছ কাটার আগে অংশীদারদের কারও সঙ্গে আলোচনা হয়নি। এ ছাড়া বন বিভাগ নির্ধারিত ১২ লাখ টাকার গাছ ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করে পুরো টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জাহান বলেন, মাসিক সমন্বয় সভায় গাছ বিক্রি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে থাকলে দরপত্রের প্রয়োজন নেই। বিক্রির টাকা অংশীদারদের দেওয়া হয়নি– এমন অভিযোগ পেয়ে গাছ কাটা বন্ধ করা হয়েছে। তবে সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির আলমের দাবি, গাছ বিক্রির বিষয়ে তানজির তাঁকে কিছুই জানাননি।
উদয়পুর ইউনিয়নের দুধাইল-তেলিহার সড়কের ২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বৃক্ষ রোপণ করেন তেলিহার কৃষি উন্নয়ন সমবায় সমিতির সদস্যরা। নিয়ম অনুযায়ী সদস্যরা গাছগুলো দেখভাল করেন। গাছ বিক্রির পর ২০ শতাংশ অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের কোষাগারে জমা হবে। ১০ শতাংশ অর্থ পাবেন জমির মালিক। বাকি টাকা উপকারভোগীরা পাবেন। গাছ কাটার আগে সমিতির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করার বিধানও রয়েছে।
তবে এসব নিয়মের তোয়াক্কা না করে সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিব ইউএনওর মৌখিক অনুমতি নিয়ে গাছগুলো বিক্রি করেছেন। ৬ জুন উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় এ অনুমতি দেওয়া হয়। সেদিনই বন বিভাগকে মূল্য নির্ধারণ করে প্রতিবেদন দিতে বলেন ইউএনও। বন বিভাগ ১ হাজার ২৬৫টি ইউক্যালিপটাস গাছের নম্বর ও মূল্য সর্বনিম্ন সাড়ে ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে ৮ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন দেয়। নিয়ম অনুযায়ী মূল্য নির্ধারণের পর চেয়ারম্যান দরপত্র আহ্বানের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু প্যানেল চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলামকে এ বিষয়ে জানাননি সমিতির সাধারণ সম্পাদক। গাছ বিক্রির টাকা পরিষদে জমা দেননি তিনি।
রোববার তাড়াহুড়া করে ঠিকাদারের শ্রমিকরা গাছ কেটে ট্রাক ও ট্রলিতে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত প্রায় ৩০০ গাছ কাটা হয়। উপস্থিত ঠিকাদার রুহুল আমিনের কাছে গাছ বিক্রির রসিদ দেখতে চাইলে তিনি জানান, কাগজপত্র ছাড়াই ১৫ লাখ টাকায় গাছ কিনেছেন। সবকিছুই দেখভাল করছেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানজির।
কালাই পৌর শহরের কাঠ ব্যবসায়ী সোহেল খন্দকার বলেছেন তিনি ২৫ লাখ টাকায় সম্পাদক তানজিমের কাছ থেকে গাছগুলো কিনতে চেয়েছেন; কিন্তু তাঁকে দেওয়া হয়নি। উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, তানজির গোপনে রাস্তার গাছগুলো ৩২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন। অথচ সদস্যদের বলছেন ১৫ লাখ টাকা। সদস্যরা অভিযোগ করেছেন। এর বিহিত হওয়া দরকার।
সাধারণ সম্পাদক তানজির আহমেদ শাকিবের দাবি, ইউএনওর মৌখিক অনুমতি নিয়ে ১৫ লাখ টাকায় গাছ বিক্রি করেছেন। গাছ কাটা শেষ হলে সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ ও জমির মালিকদেরও দেওয়া হবে। ৩২ লাখ টাকার গাছ বিক্রির অভিযোগ সঠিক না। তবে তিনি গাছ বিক্রির রসিদ দেখাতে পারেননি। অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কিনা, জানতে চাইলে এড়িয়ে যান তিনি।
সামাজিক বনায়ন, নার্সারি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কালাইয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, গাছের মূল্য নির্ধারণে কমবেশি হতে পারে কিন্তু সরকারি জায়গার গাছ টেন্ডারের বাইরে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।
জয়পুরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, সরকারি জায়গার গাছ বিক্রি করতে হলে অবশ্যই দরপত্রের মাধ্যমে করতে হবে।