ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তবে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও চলমান পরিস্থিতির কারণে বন্দরের রপ্তানিতে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। একদিকে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেলেও, অন্যদিকে গত পাঁচ মাসে বন্দরের মাধ্যমে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।
আখাউড়া স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জুলাই-নভেম্বর) প্রথম পাঁচ মাসে বন্দর দিয়ে মোট ১৪৮ কোটি ৫৫ লাখ ১১ হাজার ৩৭ টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের (জুলাই-আগস্ট) প্রথম দুই মাসে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৬১ কোটি ৮৪ লাখ ১৫২ টাকার। এটি বিগত অর্থবছরের তুলনায় ১২ কোটি ৪৫ লাখ ৭৩ হাজার ১১৫ টাকার বেশি।
রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে ছিল ছোট-বড় মাছ, শুঁটকি, পাথর, সিমেন্ট, প্লাস্টিকসামগ্রী, বর্জ্য তুলা, ফার্নিচার ও ফুট ড্রিংকস। তবে রপ্তানি পণ্যের মধ্যে মাছই ছিল সবচেয়ে বড় অংশ। বিশেষভাবে ছোট-বড় মাছ ও শুঁটকি রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
এদিকে রপ্তানি বাড়লেও গত পাঁচ মাসে বন্দর দিয়ে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। বন্দরসূত্র আরও জানিয়েছে, সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন মাসে কিছু পরিমাণ ভারতীয় জিরা আমদানি হয়েছিল। এরপর থেকে বিশেষ করে চলতি অর্থবছরের এপ্রিল-মে মাসে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি। এ ধরনের পরিস্থিতির কারণ হিসেবে বন্দরসংশ্লিষ্টরা নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন।
আখাউড়া স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসিবুল হাসান হাসিব বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কিছুটা কমেছে। এর মধ্যে রয়েছে ডলারের দর, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ওপারের (ভারতের) রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এসব কারণে বাণিজ্য ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার পরিবর্তে নিম্নমুখী হচ্ছে। তবে আমরা হতাশ নই। আমরা আশা করছি, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি ভালো হবে এবং ব্যবসা বাড়বে।’
বন্দরসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী শোয়েব ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মো. রাজীব ভূঁইয়া জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার সত্ত্বেও এ বন্দর দিয়ে রপ্তানিতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি।
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে রপ্তানি আরও বাড়বে বলে তাদের প্রত্যাশা। আখাউড়া স্থলবন্দরের মাছ রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘গত কয়েক মাসে বন্দর দিয়ে মাছ রপ্তানি প্রায় পাঁচ গুণ বেড়েছে। এর মধ্যে মৌলভীবাজারের চাতল বন্দর বন্ধ থাকায়, সেখানে উৎপাদিত মাছগুলোও আখাউড়া বন্দর দিয়ে রপ্তানি হচ্ছে। আশা করছি, ভবিষ্যতে মাছ রপ্তানি আরও বাড়বে।’ বন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী শানু মিয়া বলেন, ‘বন্দরে রপ্তানি আগের মতোই চলছে। তবে গত পাঁচ মাসে কোনো পণ্য আমদানি হয়নি।’
আখাউড়া স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘পটপরিবর্তনের কারণে বন্দরের বাণিজ্যে কোনো ধরনের প্রভাব পড়েনি। আমদানি না হলেও, বিগত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা যেন বৈধ পণ্য দ্রুত রপ্তানি করতে পারেন, সে জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমরা আশা করছি, আগামীতে রপ্তানি বাণিজ্য আরও বৃদ্ধি পাবে।’
আখাউড়া স্থলবন্দর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক বন্দর হিসেবে পরিচিত। এ বন্দরের মাধ্যমে ছোট-বড় মাছ, শুঁটকি, প্লাস্টিকসামগ্রী, পাথর, ইট, ভোজ্যতেল, বর্জ্য তুলা, সিমেন্ট, ফুট ড্রিংকসসহ প্রায় অর্ধশতাধিক পণ্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যসহ সাতটি পাহাড়ি রাজ্যে রপ্তানি হয়।