ঢাকা | বঙ্গাব্দ

হঠাৎ করেই হোঁচট খাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গতি

  • আপলোড তারিখঃ 14-08-2025 ইং
হঠাৎ করেই হোঁচট খাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গতি ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

দীর্ঘসময় ধরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গতি উত্তরোত্তর বাড়লেও হঠাৎ করেই হোঁচট খাচ্ছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গতি। গত জুন শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত ও ঋণ বিতরণ বাড়লেও কমেছে ব্যাংক, এজেন্ট এবং আউটলেটের সংখ্যা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ছয় মাস ধরে এই সেবায় এজেন্ট ও আউটলেট কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ নতুন যে পরিমাণ এজেন্ট ও আউটলেট হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি বন্ধ হয়ে গেছে। এই সেবায় আমানত বাড়লেও ঋণ তেমন বাড়ছে না। ব্যাংকাররা বলছেন, ঋণ কমে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে, এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গতি কমে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর নীতির প্রভাবেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের কার্যক্রম কিছুটা কমে গেছে মন্তব্য করে তারা বলেন, তবে আমানত ও ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি এখন পর্যন্ত ইতিবাচক। 


জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নারী উদ্যোক্তা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে সম্প্রতি তারা একটা সার্কুলার দিয়ে বলেছে, এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আউটলেট নিতে নারী পুরুষের সংখ্যা সমান হতে হবে। অর্থাৎ দুইজন পুরুষকে এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিতে হলে দুইজন নারীকেও নিয়োগ দিতে হবে। তা না হলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স বাতিল করার শর্তও দেওয়া হয়েছে।


এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাউথ-বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. ফিরোজ চৌধুরী খবরের কাগজকে বলেন, এক দশকেরও বেশি সময় আগে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিয়ের প্রসার ক্রমান্বয়েই বাড়ছিল। ব্যাংকগুলোও শাখাবিহীন এই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা সার্কুলারের প্রভাব পড়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। এতে এজেন্ট এবং আউটলেটের সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে। তবে আমানত ও ঋণ বিতরণের বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এটা ইতিবাচক দিক। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যদি জারি করা সার্কুলারের বিষয়ে কিছুটা নমনীয় হয়, তাহলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের গতি আবার আগের মতোই বাড়বে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 


বর্তমানে শাখাবিহীন ব্যাংকিংয়ে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো। এতে একদিকে ব্যাংকের খরচ কমছে অন্যদিকে গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙা হচ্ছে। যদিও হঠাৎ কিছুটা গতি কমেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। 


বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, মূলত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত রাখছেন। চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৭ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। আর শহরাঞ্চলের আমানতের পরিমাণ মাত্র ৭ হাজার ৮৯৭ কোটি টাকা। এসব আমানতের ৮২ দশমিক ৬৮ শতাংশ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর। জুন প্রান্তিক শেষে ঋণ বিতরণও বেড়েছে। এ সময় মোট ঋণ বিতরণের পরিমাণ ১৮ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। 


প্রতিবেদন অনুযায়ী, এতদিন পর্যন্ত ৩১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। এবার একটি ব্যাংকের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে ৩০টি ব্যাংক এই সেবা দেবে। এসব ব্যাংকের মোট এজেন্টের সংখ্যা কমে হয়েছে ১৫ হাজার ৩৭৩টি। যা আগের প্রান্তিকে ছিল ১৫ হাজার ৮৩৮টি। অর্থাৎ আগের প্রান্তিকের তুলনায় এজেন্টের সংখ্যা কমেছে ৪৬৫টি। আর বছরের ব্যবধানে কমেছে ৬১৮টি। 


এ সময় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের হিসাব সংখ্যাও কিছুটা কমে হয়েছে ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ২৩৬টি। যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ২ লাখ ৬৫ হাজার ১৮৬টি কম। এর মধ্যে নারীর হিসাব সংখ্যা রয়েছে ১ কোটি ২০ লাখ ৭৮ হাজার ৯৬৬টি। আগের প্রান্তিকের চেয়ে নারীর হিসাব কমেছে প্রায় এক লাখের বেশি। 


জানা গেছে, দেশের সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতেই ২০১৪ সালে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম। এ জন্য বাড়তি চার্জ গুনতে হয় না গ্রাহককে। ব্যাংকের ডেবিট কার্ড ব্যবহারের সুযোগও পাচ্ছেন তারা। ফলে এই সেবা দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পরিচালন ব্যয় কম হওয়ায় এখন ব্যাংকগুলোও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে মনোযোগ দিচ্ছে। এতে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রতিনিয়ত বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা, সেই সঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। 


একাধিক ব্যাংকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আমানত সংগ্রহ করতে অনেক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা বেছে নিয়েছে। এই সেবার মাধ্যমে কোনো কোনো ব্যাংক গ্রাম থেকে আমানত সংগ্রহ করে করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে একদিকে কোনো খরচ ছাড়াই ব্যাংকের লাভ করার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকের গ্রাহক সংখ্যাও বাড়ছে কোনো খরচ ছাড়াই। আর গ্রাহকরাও সহজেই এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারছেন এবং তাদের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন।


জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারির পর ২০১৪ সালে প্রথম এ সেবা চালু করে বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়া। এখন পর্যন্ত এ সেবায় শীর্ষে অবস্থান করছে বেসরকারি খাতের ডাচ-বাংলা ব্যাংক। এরপরই রয়েছে ব্যাংক এশিয়া এবং ইসলামী ব্যাংক।


এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সব ধরনের ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়। এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্যসংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এ ছাড়া এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন। 


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রতিটি এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ ছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারে এজেন্টরা।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে