ঢাকা | বঙ্গাব্দ

প্রভিডেন্ট ফান্ডের সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে আলেমগণের অভিমত!

  • আপলোড তারিখঃ 10-08-2025 ইং
প্রভিডেন্ট ফান্ডের সম্পত্তি বণ্টন নিয়ে আলেমগণের অভিমত! ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের জন্য প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুরক্ষা। সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য এটি জিপিএফ (জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড) এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কর্মীদের জন্য সিপিএফ (কন্ট্রিবিউশন প্রভিডেন্ট ফান্ড) নামে পরিচিত। সাধারণত কর্মীদের মূল বেতনের একটি নির্দিষ্ট অংশ এই ফান্ডে জমা রাখা হয়, যা কর্মজীবীরই প্রাপ্য। সরকার বা প্রতিষ্ঠানের কাছে এই টাকা এক প্রকার আমানত হিসেবেই থাকে। তাই একজন কর্মীর মৃত্যুর পর তার এই মূল বেতনের অংশটুকু ত্যাজ্যসম্পদ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং মৃত ব্যক্তির সব ওয়ারিশ তাদের শরিয়তসম্মত হিস্যা অনুযায়ী এর মালিক হবেন।


তবে জটিলতা দেখা দেয় ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে। উভয় প্রকার ফান্ডেই মূল বেতনের সঙ্গে সুদ হিসেবে কিছু অতিরিক্ত টাকা যোগ হয়। উপরন্তু, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর সিপিএফে বেতনের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কিছু টাকা কন্ট্রিবিউশন (এককালীন প্রদেয়) হিসেবেও জমা করা হয়। প্রশ্ন হলো, এই সুদ ও কন্ট্রিবিউশনের টাকা ওয়ারিশরা ভোগ করতে পারবেন কি না?


বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরিজীবীদের জিপিএফের বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী আলেমগণের অভিমত হলো, সরকার সুদের নামে যে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করে, তা প্রকৃত অর্থে শরিয়তসম্মত সুদ নয়, বরং সরকারের পক্ষ থেকে পুরস্কার বা অনুদান হিসেবে গণ্য হবে। তাই এই টাকাও মৃত কর্মীর মালিকানা হিসেবে তার ওয়ারিশরা ভোগ করতে পারবেন এবং তা মিরাসে বণ্টনযোগ্য হবে।


অন্যদিকে, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সিপিএফে সুদের নামে যে টাকা জমা হয়, আলেমগণের মতে তা প্রকৃত অর্থেই সুদ। এই টাকা ওয়ারিশরা ভোগ করতে পারবেন না। এই অর্থ সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সাদাকা করে দিতে হবে। এর কারণ হলো, এই টাকা কর্মীর কর্তিত বেতন ও প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কন্ট্রিবিউশনকে সুদি কারবারে বিনিয়োগ করার মাধ্যমে অর্জিত মুনাফা। তবে, কন্ট্রিবিউশন হিসেবে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যে টাকা জমা করা হয়, তা কর্মীর প্রতি অনুগ্রহ বা উপহার হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে এই কন্ট্রিবিউশনের টাকা মূল বেতনের মতোই ভোগ করা যাবে এবং ওয়ারিশদের মাঝে বণ্টন করা হবে।


সংক্ষেপে বলতে গেলে- সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড (জিপিএফ): সরকারের বর্তমান নীতিমালা বহাল থাকা পর্যন্ত ফান্ডে জমাকৃত মূল বেতন এবং সুদের নামে প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুরো টাকাই মৃত ব্যক্তির প্রকৃত ওয়ারিশদের মাঝে তাদের হিস্যা অনুযায়ী বণ্টন হবে।


উল্লেখ্য, সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের ঐচ্ছিক অংশের সুদের ব্যাপারে আলেমগণের মাঝে মতভিন্নতা রয়েছে; কেউ কেউ এটিকে প্রকৃত সুদ মনে করেন এবং সাদাকা করার কথা বলেন।


বেসরকারি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের প্রভিডেন্ট ফান্ড (সিপিএফ): এখানে কর্মীদের জমাকৃত মূল টাকা এবং প্রতিষ্ঠানের দেওয়া কন্ট্রিবিউশন ওয়ারিশদের মাঝে নিয়ম অনুযায়ী বণ্টন হবে। তবে সুদের নামে যে টাকা জমা হয়, তা সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সাদাকা করে দিতে হবে। ওয়ারিশরা এই অংশ ভোগ করতে পারবেন না।


মিরাসের এই বিধানগুলো জানা থাকলে প্রভিডেন্ট ফান্ডের বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করা সহজ হবে এবং ওয়ারিশরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন না।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে