ঢাকা | বঙ্গাব্দ

চলনবিলে মাছের আকালে ফাঁকা শুঁটকি চাতাল

  • আপলোড তারিখঃ 13-09-2024 ইং
চলনবিলে মাছের আকালে ফাঁকা শুঁটকি চাতাল ছবির ক্যাপশন: তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটি এলাকার একটি শুঁটকি চাতাল

চলনবিল অঞ্চলে প্রতি বছরই পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কর্মব্যস্ততা বেড়ে যায় শুঁটকি চাতালগুলোয়। প্রচুর মাছ ধরা পড়ায় বাছাই ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন শ্রমিকরা। ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ পর্যন্ত প্রতিদিন চলতে থাকে এ কর্মযজ্ঞ। তবে এবার মৌসুম শুরু হলেও বিলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ মিলছে না। এতে শুঁটকি উৎপাদন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।


এক দশক ধরে দেশি মাছে শুঁটকি তৈরি করেন উল্লাপাড়া উপজেলার বিনায়েকপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম। চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ উপজেলার মহিষলুটিতে তাঁর চাতাল। এখানে তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ২২ জন নারীশ্রমিক কাজ করেন। দিনে হাজিরা পারিশ্রমিক পান ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। এ আয় দিয়েই তারা সারা বছর সংসার খরচ চালাতে পরিবারকে সহায়তা করেন। মাছের সংকটে চাতালে কাজ নেই বললেই চলে।


জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত বছর পুরো মৌসুমে চাতালে ২ হাজার মণ শুঁটকি তৈরি হয়েছে। মাছের সংকটে এ বছর এর অর্ধেক উৎপাদন করতে পারব কিনা শঙ্কায় আছি। মাছের এ ধরনের আকাল গত চার পাঁচ বছরে ঘটেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি। 


ভরা মৌসুমে মাছের আকালে অলস পড়ে আছে জাহাঙ্গীরের মতো চলনবিল অঞ্চলের প্রায় ১৩০ থেকে ১৫০টি শুঁটকি তৈরির চাতাল। শ্রাবণের মাঝামাঝি সময়ে এসব চাতালে শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু হলেও এবার চিত্র ভিন্ন। ভরা মৌসুমে শুঁটকি তৈরির উপযোগী মাছ পাওয়া যায়নি। 


তাড়াশ মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে শুঁটকি তৈরির মৌসুমে শুধু তাড়াশে ৩০০ টন শুঁটকি উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর তেমন মাছ পাওয়া যায়নি। বড় ও মাঝারি আকারের শুঁটকির চাতালগুলো অলস পড়ে রয়েছে। খাল, ডোবা শুকিয়ে গেলে কিছু মাছ পাওয়া যাবে সে ভরসায় আছেন চাতাল মালিক ও শ্রমিকরা।


মাছ সংকটের কারণ হিসেবে স্থানীয়রা বলছেন, আগে চলনবিলের ৯টি উপজেলার বিভিন্ন অংশে বর্ষা মৌসুমে সাড়ে তিন থেকে চার মাস তিন থেকে আট ফুট পর্যন্ত পানি থাকত। জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি থাকার আয়ুকাল ও পরিমাণ কমে এসেছে। চলতি বছর শেষ আষাঢ়ে চলনবিলের বিভিন্ন অংশে মাঝারি মানের বন্যার দেখা মিলে; যা দেড় মাসের মতো স্থায়ী ছিল। ভাদ্র মাসের শেষে তাড়াশ, উল্লাপাড়া, শাহজাদপুর, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, গুরুদাসপুর, সিংড়া, আত্রাই এলাকার বিভিন্ন অংশ থেকে পানি একেবারেই নেমে গেছে। এ কারণে শুঁটকি করা হয় এমন মাছ যেমন–পুঁটি, ট্যাংরা, টাকি, মাঝারি আকারের বোয়াল, শোল, চান্দা, গুচি, ছোট আকারের ইছা বা চিংড়ি চাহিদা মতো পাওয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি দামও অনেক বেশি। 


নাটোরের গুরুদাসপুর এলাকার শুঁটকির চাতাল মালিক নান্নু মিয়া জানান, চলনবিলের চাতাল মালিকরা শুঁটকি তৈরি করে জীবন জীবিকা চালান। বিকল্প পেশাও নেই তাদের। মাছ সংকটের কারণে ছোট আকারের কিছু চাতাল চালু থাকলেও বড় চাতালের অবস্থা নাজুক। 


বিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তাড়াশের মহিষলুটি, মান্নাননগর, সিংড়ার দহ, সলঙ্গাসহ বড় আকারের মাছের আড়তগুলোতে এখন চাষ করা মাছে ঠাসা। এসব আড়তে প্রতিদিন এক থেকে দেড় কোটি টাকার চাষের মাছ বিক্রি হয়। দেশীয় প্রজাতির বিলের মাছের আমদানি এবার খুবই কম বলে জানান মহিষলুটি মাছের আড়তদার মিঠু হোসেন।


উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মশগুল আজাদ বলেন, এ বছর বিলের পানি আগেভাগেই নেমে গেছে। তাই দেশি মাছ খুব একটা পাওয়া যায়নি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ, আওয়ামী সমর্থকদের খুশির কী কারণ ?