জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দীন আহমেদ। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ব গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপি আয়োজিত গণতন্ত্র শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে এ আহ্বান জানান তিনি।
এ সময় সালাউদ্দীন আহমেদ বলেন, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন আমরা করেছিলাম। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। সেই কেয়ারটেকার সরকার বিলুপ্ত করে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে নতুনভাবে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনের প্রবর্তন করে। অন্তঃহীন সংগ্রাম, ত্যাগ তিতীক্ষা, রক্ত শ্রম এবং প্রাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ পুনরায় স্বাধীনতা অর্জন করেছে।
এই স্বাধীনতা, এই গণতন্ত্রের জন্য যারা যুদ্ধ করেছে, বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য যারা বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছে, তাদের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথম শহিদ রংপুরের সাঈদ, দ্বিতীয় শহিদ চকরিয়া পেকুয়ার সন্তান, আমার সন্তান ওয়াসিম। সমস্ত গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, আন্দোলনে যুদ্ধে চট্টগ্রাম সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন, সবকিছু এমনি এমনি এসেছে, তাহলে এটা ভুল কথা। মোট ৪৮৫ জন শহিদের মধ্যে এ গণবিপ্লবে ৪২২ জন শহিদ বিএনপির নেতাকর্মী। ১১৩ জনের বেশি ছাত্রদলের নেতাকর্মী। এ আন্দোলন সংগ্রামে সাতশ’র বেশি মানুষ গুম-খুনের শিকার হয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩ জন শুধু বিএনপির নেতাকর্মী। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে প্রায় ২৭০০ মানুষ বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে, তার মধ্যে শত শত বিএনপির নেতাকর্মী।
তিনি আরও বলেন, এত রক্ত, এত ঘাম, এত প্রাণ, এত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা অর্জন করেছি বাংলাদেশে নতুন স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের নতুন গণতন্ত্র দিবস। বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। কিন্তু গণতন্ত্র, এই নতুন স্বাধীনতা, এই বিজয়কে যদি আপনারা অর্থবহ করতে চান, তাহলে ধৈর্য্য ধরতে হবে। আন্দোলন চালু রাখতে হবে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করতে হবে। সুতরাং চলমান এ আন্দোলন যদি সত্যিকারভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হবে, ততদিন চালু রাখতে হবে।
প্রকৃত গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যতদিন পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত না হবে, সংসদ প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথে এ আন্দোলন অব্যাহত রাখবো। বাংলাদেশে গণহত্যাকারীদের আর কোনোদিন জায়গা হবে না। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি চলবে না। যদি গণহত্যাকারীদের রাজনীতি চলে, তাহলে বাংলাদেশ আবার পরাধীন হবে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের এখানে তাঁবেদারি চলবে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সবাই ধৈর্য্য ধরুন, সুশৃঙ্খল থাকুন। গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রাম চালু রাখুন। যতদিন পর্যন্ত এ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাবার ঘোষণা না দেয়, ততদিন এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং উপদেষ্টাবৃন্দদের আহ্বান জানাই, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনমুখি সংস্কার করুন এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করুন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিগত সতেরো বছর নির্যাতনের পরও বিএনপিকে স্তব্ধ করতে পারেনি। আগামী ১৭ বছর চেষ্টা করলেও পারবেনা। রাত যত গভীর হয় ভোর তত নিকটে আসে। আওয়ামী লীগ মনে করেছিল ভোর বুঝি আর হবে না। কিন্তু সকাল ঠিকই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। শেখ হাসিনা মা-বোনদের জন্য কলঙ্ক। হাসিনার মত স্বৈরশাসক ইতিহাসেও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে তাই বলে আমাদের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় আওয়ামী লীগের কেউ যেন আশ্রয় না পায়। আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেক টাকা। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
সালাউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে শোভাযাত্রাটি আলমাস হয়ে কাজীর দেউরী, লাভ লেইন, জুবলী রোড়, নিউ মার্কেট, কোতোয়ালী হয়ে লালদিঘি পাড়ে এসে শেষ হয়। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক আলহাজ্ব এরশাদ উল্লাহর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, জয়নাল আবেদীন ফারুক, গোলাম আকবর খোন্দকার, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিভাগীয় শোভাযাত্রার সমন্বয়কারী মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন।