ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল
  • আপলোড তারিখঃ 13-10-2024 ইং
বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আওতায় বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বাড়াতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের চলমান ওয়াশিংটন সফরে বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা হয়। মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে বাংলাদেশকে একটি বড় অংশীদার হিসাবে মূল্যায়ন করে যুক্তরাষ্ট্র এবং সেটির আলোকে দৃঢ় সহযোগিতা গড়তে চায় বাইডেন প্রশাসন।


এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কূটনীতিতে দয়া-দাক্ষিণ্য (চ্যারিটি) দেখানোর কোনও সুযোগ নেই। সব দেশই তাদের নিজস্ব জাতীয় স্বার্থ অনুযায়ী কাজ করে থাকে। বাংলাদেশ বা যুক্তরাষ্ট্র এর ব্যতিক্রম নয়।’



ঢাকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের সহযোগিতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের কিছু চাওয়া-পাওয়া আছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক কিছু হিসাব-নিকাশ আছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার ভারসাম্য কীভাবে নির্ধারণ করবে, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।’



স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জায়ার সঙ্গে মো. জসিম উদ্দিন (ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া)

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের লেন্স থেকে দেখে না। বরং পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র তার বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশকে কীভাবে যুক্ত করতে পারে, সেটির প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি। বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার মাত্রা কতটুকু হবে, সেটি নির্ধারিত হবে বাংলাদেশ কতটুকু মার্কিন প্রভাব বলয়ে অবস্থান করে, তিনি জানান।


উল্লেখ্য, পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে মো. জসীম উদ্দিন গত মাসে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পদে নিজের প্রথম বৈদেশিক সফরে তিনি ওয়াশিংটনে গেছেন। গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওয়াশিংটনে তিনি অন্তত সাতটি বৈঠক করেছেন। এর মধ্যে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি রিচার্ড ভার্মা, আন্ডার সেক্রেটারি জন বাস ও উজরা জায়া, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, প্রিন্সিপাল ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি স্মিথ উইলসন; হোয়াইট হাউজের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সিনিয়র ডিরেক্টর লিন্ডসে ফোর্ড এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইউএসটিআর ব্রেন্ডন লিঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেন।



বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সহযোগিতা, যেমন- বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিষয়গুলো উত্থাপন করে। চলমান বিভিন্ন ধরনের সংস্কার কার্যক্রমে মার্কিন সহায়তার বিষয়েও আলোচনা হয়। মোটাদাগে সহযোগিতার বড় ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।


এ বিষয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ‘চলমান সংস্কারগুলোর বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন কর্মকর্তাদের অবহিত করা হয়। এর মধ্যে বিচার বিভাগ বা পুলিশ প্রশাসন সংস্কারে অভিজ্ঞতা আছে যুক্তরাষ্ট্রের। তারা এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে চায়।’


বাংলাদেশে ব্যাংকিং খাতের অবস্থা বেশ নাজুক এবং এক্ষেত্রে তাদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা আছে এবং এ বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র কাজ করতে চায় বলে তিনি জানান।


অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের জায়গা হচ্ছে শ্রম অধিকার, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, আঞ্চলিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য বিষয়। বাংলাদেশকে তারা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে একটি বড় অংশীদার হিসাবে মনে করে– এ বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্র আবার মনে করিয়ে দিয়েছে বলে জানান আরেক কর্মকর্তা।


পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও অন্য কর্মকর্তারা (ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া)


যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সহযোগিতার বড় ক্ষেত্রগুলো মোটামুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিতে হবে। এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘খাতভিত্তিক সুনির্দিষ্ট সহযোগিতা প্রস্তাব দিতে হবে বাংলাদেশকে। এক্ষেত্রে সরকারিভাবে অথবা প্রকল্প আকারে সহযোগিতা করতে পারে দেশটি।’


এছাড়া বহুপক্ষীয় মেকানিজম, যেমন জাতিসংঘ বা আঞ্চলিক সহযোগিতার অধীনেও যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করতে পারে বলে তিনি জানান।


এ বছরের মে মাসে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদকে ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১(সি) ধারার আওতায় ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করার পর যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রকাশ্যে সেটি ঘোষণা করে। এই প্রথমবারের মতো কোনও বাংলাদেশিকে প্রকাশ্যে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এদিক থেকে দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চায় বাংলাদেশ।


গত বছরের আগস্ট মাসে স্টেট ডিপার্টমেন্টের গ্লোবাল অ্যান্টি-করাপশন কোঅর্ডিনেটর রিচার্ড নেফিউ ঢাকা সফর করেন। তিনি তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সচিব মো. মাহবুব হোসেনসহ বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনায় দুই দেশ একসঙ্গে কীভাবে কাজ করতে পারে—বিশেষ করে অর্থপাচারের বিষয়ে, সেটি নিয়ে আলোচনা করেন।


পররাষ্ট্র সচিব মো. সজিম উদ্দিন ও মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি সেক্রেটারি রিচার্ড ভার্মা (ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া)

এ বিষয়ে আরেক কর্মকর্তা বলেন, ‘রিচার্ড নেফিউর স্থলাভিষিক্ত স্মিথ উইলসনের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা হয়েছে।


এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা আছে এবং তারা হয়তো প্রশিক্ষণ, সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে পারে বলে তিনি জানান।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ, আওয়ামী সমর্থকদের খুশির কী কারণ ?