ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি

  • আপলোড তারিখঃ 16-11-2024 ইং
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে অবাধে চলছে অতিথি পাখি শিকার ও বিক্রি ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

বুধবার (১৩ নভেম্বর) সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের দীঘিসগুনা বাজারে বিক্রি হচ্ছে শিকারির হাতে ধরা পড়া অতিথি পাখি। তবে সেগুলো বিক্রি না করতে সচেতনতা চালাচ্ছেন এক ব্যক্তি।


কার্তিক মাসের শেষ দিকে হালকা শীতের আমেজে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় প্রতিবছরের মতো অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে। তবে চলনবিল অংশের এ উপজেলায় শিকারিদের হাতে মারা পড়ছে এসব পাখির একটা অংশ। সেগুলো বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন এলাকার বাজারে।


স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল বাজার ও দীঘিসগুনা বাজারে অতিথি পাখি বিক্রি হয়। পাখিশিকারিরা রাতের বেলায় পাখি শিকার করে ভোরে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এ ছাড়া বারুহাঁস ইউনিয়নের বস্তুল বাজার ও পঁওতা বাজারে বক পাখি বিক্রি হয়।



স্থানীয় দুজন শিকারি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁদের ধারণা, পাখি শিকারে তেমন বিধিনিষেধ নেই। বরং অন্য কাজের পাশাপাশি অল্প শ্রমে পাখি ধরে বিক্রি করে অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যায়। লোকজনের কাছে অতিথি পাখির চাহিদা আছে। শিকারিদের সঙ্গে তাঁরা আগে থেকেই যোগাযোগ রাখেন। অনেকে শিকারিদের বাড়ি থেকে পাখি কিনে নিয়ে যান।


স্থানীয় একটি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চলনবিলের পানি নামার সময় পুঁটি, দারকিনা, খলিশাসহ প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ ও পোকামাকড় পাওয়া যায়। মূলত খাবারের লোভে ও শীত থেকে বাঁচতে শামুকখোল, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আশ্রয় নেয় চলনবিলে। কিন্তু শিকারিরা জাল ও বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে এসব পাখি শিকার করেন। তাঁরা হয়তো জানেন না, বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখিশিকারিদের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডের বিধান আছে। এ ছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।


পাখি শিকার করে ও শিকারিদের কাছ থেকে পাখি কিনে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন বলে জানান চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির তাড়াশ উপজেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এতে বোঝা যায়, পাখি শিকার করা যে দণ্ডনীয় অপরাধ, তা নিয়ে শিকারি বা ক্রেতাদের মাথাব্যথা নেই। চলনবিলের পাখি বাঁচাতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি লোকজনের মধ্যে ব্যাপকভাবে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে বলে জানান তিনি।


উপজেলার ভিলেজ ভিশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক মো. শরীফ খন্দকার ও উপদেষ্টা সাইফুল ইসলাম জানান, দুই দিন আগে সকালে উপজেলার দীঘিসগুনা বাজারে গিয়ে অতিথি পাখি কেনাবেচার দৃশ্য দেখতে পান তাঁরা। তাঁদের মতে, পাখিশিকারি, ক্রেতা, গ্রামের লোকজন একই সঙ্গে অসচেতন ও চালাক। অন্যায় জেনেও তাঁরা এ কাজ করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলনের আহ্বান জানান।


উপজেলা বন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বেশির ভাগ শিকারি রাতে পাখি শিকার করেন। সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি।


তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুইচিং মং মারমা বলেন, শিকারিদের অবস্থান জেনে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ, আওয়ামী সমর্থকদের খুশির কী কারণ ?