অনলাইন ডেস্ক:
ফিলিস্তিনে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার জন্য কাতারের দোহায় হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চলছে। হামাসের দাবি, যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। এর মাধ্যমে অবরুদ্ধ ভূখণ্ডে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের সম্ভাবনা যেমন কমেছে, তেমনি কমেছে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশাও। অথচ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য গোটা বিশ্বই আস্তে আস্তে সরব হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে গত ২৪ মাসে অবরুদ্ধ গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র উঠে এসেছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি হলে তা পুনর্গঠনে ৫৩ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন হবে। এ অর্থের অধিকাংশের জন্যই অঞ্চলটিকে বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হবে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিলিস্তিনের গ্যাস রিজার্ভের মাধ্যমে খুব সহজেই তারা পুনর্গঠন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। প্যালেস্টাইন অথরিটিকে যদি স্বাধীনভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্র সমন্বয়ের দায়িত্ব দেওয়া যায়, তাহলে গাজার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কঠিন কিছু হবে না। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়।
দ্য গার্ডিয়ানের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজার গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে বর্তমান বাজারদর হিসেবে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করা সম্ভব। যদি প্যালেস্টিনিয়ান অথরিটিকে এর সমন্বয় করতে দেওয়া হয়, তাহলে আগামী ১৫ বছর বার্ষিক ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় সম্ভব। এ আয়ের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পক্ষে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করা সম্ভব না হলেও বৈদেশিক সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীলতা সহজেই এড়ানো যাবে। তবে ইসরায়েল বরাবরই নানা ধরনের আইনি জটিলতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনকে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং সমুদ্রসীমা থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে।
জানা গেছে, গাজায় ২০০০ সালে প্রথম গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। এরপর আঞ্চলিক জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য ইতালির একটি প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু করে। ওই সময় ইসরায়েলই গ্যাস উত্তোলনের জন্য লাইসেন্স দিয়েছিল। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনে কিছু গ্যাস সরবরাহ করে অধিকাংশই নিজেদের করে নিত ইসরায়েল। কিন্তু ২০০৭ সালে হামাস গাজার ক্ষমতায় আসার পর নড়েচড়ে বসে ইসরায়েল। এতদিন গাজার গ্যাসক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োগ করে একচ্ছত্রভাবে গ্যাস উত্তোলন করার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে ওঠে সংগঠনটি। হামাস ক্ষমতায় আসার পর তাদের হাতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেওয়ায় আগ্রহ ছিল না ইসরায়েলের। এভাবেই নানা আইনি জটিলতা সৃষ্টির মাধ্যমে ফিলিস্তিনের গ্যাসক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে ওঠে ইসরায়েল। গত ৩০ বছরে একাধিকবার ফিলিস্তিনিদের প্রাকৃতিক সম্পদ সমন্বয়ের সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। প্রতিবারই ইসরায়েল নানা আইনি প্রতিবন্ধকতা তৈরি করায় উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে ফিলিস্তিনের জোন জি বলে পরিচিত অঞ্চলে ইসরায়েল পাঁচটি লাইসেন্স প্রদান করেছে। কিন্তু এ অঞ্চলে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া ফিলিস্তিন ২০১৯ সালে তাদের সমুদ্রসীমার দাবি করলেও এ ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়নি ইসরায়েল। বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল চায় জ্বালানি থেকে শুরু করে সম্পদ সমন্বয়ের জন্য ফিলিস্তিন তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকুক।