আজ ৫ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন পালিত হচ্ছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস’, যা ২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ঐতিহাসিক মোড় এনে দেয়।
সেদিন, ছাত্র-জনতার টানা আন্দোলনে টালমাটাল হয়ে পড়ে রাষ্ট্রক্ষমতা। রাজপথে জনতার গর্জনে কেঁপে উঠে সরকারব্যবস্থা। একপর্যায়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাধ্য হন ক্ষমতা ছাড়তে এবং দেশত্যাগ করতে
দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে এই গণজাগরণে। রাজপথে রক্ত দিয়েই জনগণ পুনরুদ্ধার করে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। বাংলার মাটি ফিরে পায় তার হারানো স্বাধীনতা-বোধ, নতুন করে জেগে ওঠে গণতন্ত্রের আদর্শ।
রাষ্ট্রীয়ভাবে দিনটি এখন জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা শহরে দিনটি উদ্যাপিত হচ্ছে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।
সকাল ৯টায় ৬৪ জেলায় ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে’ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনুষ্ঠিত হয় প্রার্থনা ও মোনাজাত। শহীদদের সম্মানে দেশজুড়ে বইছে শ্রদ্ধা আর কৃতজ্ঞতার আবহ।
ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে আয়োজন করা হয়েছে ‘জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা’। প্রস্তুত রাখা হয়েছে মূল মঞ্চ, আধুনিক আলো ও সাউন্ড সিস্টেমসহ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা-ব্যবস্থা।
বিকেল ৫টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজন করা হয়েছে দিবসটির মূল অনুষ্ঠান। সেখানে 'জুলাই ঘোষণাপত্র' পাঠ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বাংলাদেশ টেলিভিশন অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় আকাশজুড়ে চলবে ড্রোন প্রদর্শনী। রাত ৮টায় থাকবে বিশেষ ব্যান্ড সংগীতানুষ্ঠান।
দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এক বাণীতে বলেন, বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের এই দিনে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে বিজয় অর্জন করে।
তিনি আরও বলেন, এই অভ্যুত্থান ছিল দীর্ঘদিনের দুঃশাসন, দুর্নীতি, গুম, খুন, ভোটাধিকার হরণের বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের ক্ষোভের চূড়ান্ত প্রকাশ। এর মূল লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের ক্ষমতায়ন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আরও উল্লেখ করেন, জুলাইয়ের চেতনার পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের মাধ্যমেই একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। আমি প্রত্যাশা করি, এই গণ-অভ্যুত্থান দেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক উত্তরণে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, জুলাই আমাদের দেখিয়েছে আশার আলো। এটি একটি বৈষম্যহীন, দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের সূচনা করেছে।
তিনি বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা যে সুযোগ পেয়েছি, তা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। এখনও পতিত স্বৈরাচার ও তার লুটেরা গোষ্ঠী দেশকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। দল-মত নির্বিশেষে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে তা মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, আসুন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যেখানে আর কোনো স্বৈরাচার বা ফ্যাসিস্ট অপশাসনের ঠাঁই থাকবে না।
এ দিবসকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন র্যালি, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে দিবসটি জাতীয় গৌরবের আবহে।