ঢাকা | বঙ্গাব্দ

স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে দেশি জাতের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন

  • আপলোড তারিখঃ 01-09-2025 ইং
স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে দেশি জাতের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

স্বল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে সহজ পদ্ধতিতে দেশি জাতের মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে সফলতা পেয়েছেন জামালপুরের তরুণ উদ্যোক্তারা। দেশি মুরগির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এখান থেকে প্রতি মাসে লক্ষাধিক বাচ্চা যাচ্ছে সারা দেশে। নিজস্ব প্রযুক্তি, ডিমের সহজলভ্যতা ও গড়ে ওঠা বাজারের কারণে দ্রুত প্রসার ঘটছে এ ব্যবসার। উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারি সহযোগিতা পেলে এ শিল্প আরও বড় হবে।


চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন জামালপুর সদর উপজেলার তিতপল্লা ইউনিয়নের কাষ্টসিংগা গ্রামের দুই তরুণ হুমায়ুন কবির ও আল মামুন। একজন পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন, অন্যজন ছিলেন আনসার বাহিনীতে। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে ২০১৭ সালে তারা একটি ইনকিউবেটর মেশিন কিনে টার্কির ডিম ফোটানো শুরু করেন। প্রথমদিকে লাভ না হলেও হতাশ না হয়ে দেশি মুরগির ডিম ফোটানো শুরু করেন। সেখান থেকেই আসে সাফল্য।


শুরুতে যৌথভাবে হ্যাচারি চালালেও কয়েক বছরের ব্যবধানে ব্যবসা বড় হওয়ায় এখন তারা আলাদা হ্যাচারি গড়ে তুলেছেন। স্থানীয়রা প্রথমে তাদের নিয়ে উপহাস করলেও এখন তাদের পথ অনুসরণ করে অনেকেই এ ব্যবসায় নেমেছেন। কাষ্টসিংগা গ্রামে বর্তমানে অন্তত ৪২ জন উদ্যোক্তা দেশি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত আছেন ১০০ থেকে ১৫০ জন।


স্বল্প খরচে ইনকিউবেটর মেশিন তৈরি করা যায়। স্থানীয়ভাবে ডিম সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ইনকিউবেটরে রাখা হয়। প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টা পর ডিম ঘোরানো ছাড়া তেমন কোনো ঝামেলা নেই। ২১ দিনেই ডিম থেকে বাচ্চা বের হয়। এরপর ঘরের ভেতর ব্রুডিং করে খাদ্য ও পানি দেওয়া হয়। সেখান থেকেই সরাসরি বিক্রি হয় মুরগির বাচ্চা।


ব্যবসাটি কম খরচে, কম সময়ে এবং ঝামেলাহীন হওয়ায় নারী উদ্যোক্তারাও আগ্রহী হচ্ছেন। রাবেয়া নামের এক নারী বলেন, ‘ঘরের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মেশিনে বাচ্চা ফুটিয়ে বিক্রি করি। এতে ঘরে বসেই আয় করা যায়।’


৪ থেকে ৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মাসে গড়ে ১ থেকে ২ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে উদ্যোক্তাদের। ৭০ থেকে ৮০ হাজার ডিম ইনকিউবেটরে দিলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার বাচ্চা পাওয়া যায়। প্রতিটি ডিমের দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা, আর প্রতিটি বাচ্চা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। ফলে লাভ নিশ্চিত।

উদ্যোক্তা আল মামুন জানান, ‘আনসার বাহিনীর চাকরি ছেড়ে আমি এই ব্যবসা শুরু করি। বর্তমানে আমার ৩০ থেকে ৪০টি ইনকিউবেটর মেশিন রয়েছে। প্রতিটি মেশিনে ২ থেকে ৩ হাজার ডিম বসানো যায়। মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করি। এগুলো দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। চাকরির চেয়ে এখন অনেক ভালো আছি।’


তার বন্ধু হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আমাদের দুই বন্ধুর ইচ্ছা ছিল এলাকায় বসেই কিছু করা। ইউটিউব দেখে আমরা প্রথমে টার্কির ডিম দিয়ে শুরু করি। পরে দেশি মুরগির ডিম ফোটাতে শুরু করি। এখন আমাদের এলাকার ১০০ জনের বেশি মানুষ এ পেশার সঙ্গে জড়িত।


শামীম আহমেদ নামের আরেক উদ্যোক্তা জানান, ‘এলাকার বড় ভাইদের দেখে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নেমেছি। সরকারি সহায়তা ছাড়াই আমরা সফল হয়েছি। তবে যদি প্রশিক্ষণ ও ঋণ সুবিধা পাই, আরও বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব হবে।’


উদ্যোক্তারা জানান, এখন তারা নিজেরাই যন্ত্রাংশ কিনে ইনকিউবেটর বানাতে পারেন। খরচ হয় মাত্র ২৫ থেকে ২৬ হাজার টাকা। ডিম কেনা ও বিদ্যুৎ ছাড়া তেমন বাড়তি খরচ নেই। বাচ্চার প্রচুর চাহিদা থাকায় আগে থেকেই পাইকাররা অর্ডার দেন। ফলে বিক্রি নিয়ে ঝামেলা হয় না।


জামালপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশি মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে অনেক উদ্যোক্তা লাভবান হচ্ছেন। আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দেব। ঋণ সুবিধা পেতে অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।’


বর্তমানে জামালপুর থেকে প্রতি মাসে ৫ থেকে ৬ লাখ দেশি মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে সারা দেশে। উদ্যোক্তাদের মতে, সরকারিভাবে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও ঋণ দেওয়া হলে এ ব্যবসার প্রসার আরও বাড়বে। কর্মসংস্থান তৈরি হবে, বদলে যাবে গ্রামের অর্থনীতি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে