ঢাকা | বঙ্গাব্দ

ফেনীতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ, মৃত্যুর মুখে ২১০ রোগী

  • আপলোড তারিখঃ 09-09-2024 ইং
ফেনীতে ডায়ালাইসিস সেবা বন্ধ, মৃত্যুর মুখে ২১০ রোগী ছবির ক্যাপশন: ছবি: সংগৃহীত

বন্যার পানিতে নিচতলা তলিয়ে যাওয়ায় কিছুদিন স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ থাকলেও চালু হয়েছে ফেনী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। তবে অন্যান্য সেবা স্বাভাবিক হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস সেবা কার্যক্রম। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নিয়মিত সেবা নিতে আসা রোগীরা। দীর্ঘ ২১ দিন ধরে বন্ধ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার। শহরের মাত্র চারটি বেসরকারি ক্লিনিকে সেবাটি চালু থাকলেও সেখানে ব্যয় প্রচুর। ফলে সেই ব্যয় মেটাতে না পেরে জীবন সংকটে অনেক হতদরিদ্র, মধ্য ও নিম্নবিত্ত রোগীরা এখানেই চিকিৎসা সেবা নেন। সেবা না পেয়ে ইতিমধ্যে দুইজন রোগী মারা গেছেন বলে জানা গেছে।


সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের হেমোডায়ালাইসিস ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ৫/৬ জন রোগী ডায়ালাইসিস নিতে আসলেও বন্ধ থাকায় চলে যাচ্ছেন। কবে চালু হবে তার সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আসিফ ইকবাল। তিনি বলেন, হেমোডায়ালাইসিস ইউনিটের মোটর ও কিছু যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তা মেরামতের জন্য ঢাকা পাঠিয়েছি, এখনো আসেনি। আসলে সেবা পুনরায় চালু হবে।


সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ভোর রাতে সুলতানা আক্তার মুন্নী নামে একাডেমি রোডের এক ডায়ালাইসিস রোগী মারা গেছে। পরশুরামের আরেক রোগী বন্যার কারণে ডায়ালাইসিস করতে না পেরে মারা গেছেন।


মোস্তাফিজুর রহমান নামে এক রোগী বলেন, সরকারি খরচের তুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস খরচ ৫-৬ গুণ বেশি। হাসপাতালের সেবা বন্ধ রাখায় বেসরকারি ক্লিনিকগুলো এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রচুর টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পাশাপাশি ভোগান্তি তো রয়েছেই। তাছাড়া প্রতি রোগী ২২ হাজার টাকা করে ছয় মাসের জন্য হাসপাতালে জমা দিলেও এখন সেবা পাচ্ছি না।


পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের ফাহিমা আক্তার বিথি বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যায় ভুগছেন। প্রাইভেট হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করাতে অনেক টাকা খরচ হয়। ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তার ডায়ালাইসিস চলছিল। বন্যার পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডায়ালাইসিস বিভাগের সব যন্ত্রাংশ ওপর তলায় তুলে রোগীদের ছুটি দিয়ে দেন। তিন সপ্তাহ পার হলেও এখনো সেবা কার্যক্রম শুরু হয়নি। 


হাসপাতাল সূত্র জানায়, ফেনী জেলার ছয়টি উপজেলাসহ আশেপাশের খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রামের মিরসরাই, সীতাকুণ্ড, নোয়াখালীর বসুরহাট, সেনবাগ, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ চার জেলার মানুষের একমাত্র ভরসা ফেনী জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে ২১০ কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস সেবা নিচ্ছেন। আর এখন প্রায় ৫ শতাধিক আবেদন জমা পড়ে আছে। একজন মারা গেলে সিরিয়াল পাবে অন্যজন।


ফেনী জেনারেল হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস বিভাগের প্রধান কিডনি বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দেব সাহা বলেন, কিডনি জটিলতার রোগীদের গড়ে সপ্তাহে দুইবার রক্ত ডায়ালাইসিস করতে হয়। এটি করা না গেলে অনেক বড় বিপদ বা মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। 


ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আসিফ ইকবাল বলেন, বন্যার কারণে হাসপাতালের সব ভবনের নিচতলা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে। বাধ্য হয়ে হাসপাতালে দ্বিতীয় তলায় জরুরি সেবা চালু রেখেছি। স্ক্যান ও ডায়ালাইসিস বিভাগ নিচ তলায় হওয়ায় এখনো সেবা কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। আশা করছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সব সেবা কার্যক্রম চালু করা যাবে।


ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আবুল খায়ের মিয়াজীর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোসাম্মদ শাহীনা আক্তারকে অবগত করা হলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।


উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথমে ৬ শয্যা নিয়ে ডায়ালাইসিস ইউনিট চালু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে চাহিদা বাড়ায় ধীরে ধীরে ১০ শয্যায় উন্নীত করে তিন শিফটে প্রতিদিন ৩০ জন রোগীর নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হচ্ছিলো। পাশাপাশি একজন কনসালটেন্টসহ দুইজন মেডিক্যাল অফিসারের অধীনে ৯ জন নার্স শিফট অনুযায়ী কর্মরত আছেন।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ, আওয়ামী সমর্থকদের খুশির কী কারণ ?