চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম থেকে শুঁটকি রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এই জেলা থেকে ৭০ লাখ ৩৫ হাজার মার্কিন ডলার মূল্যের শুঁটকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৫ লাখ ডলার বেশি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রপ্তানি হওয়া এসব শুঁটকি সবচেয়ে বেশি গেছে ভারতে।
এ ছাড়া পৃথিবীর যেসব প্রান্তে বাঙালিদের বসবাস সেসব দেশে বাংলাদেশের শুঁটকির চাহিদা বেশি। এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ রয়েছে। তারা রপ্তানিকারকদের এগিয়ে আসার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশীয় বাজারে মাছের দাম বেশি হওয়ায় তারা পর্যাপ্ত শুঁটকি রপ্তানি করতে পারছেন না। এই খাতে তারা সরকারি প্রণোদনা দাবি করেন।
বাংলাদেশ মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া শুঁটকির বড় অংশ যায় হংকং, সিঙ্গাপুর, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম দিয়ে রপ্তানি হয় সবচেয়ে বেশি। বিগত সময়ের তুলনায় প্রতিবছরই এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র মতে, চট্টগ্রাম থেকে ১৭টি প্রতিষ্ঠান শুঁটকি রপ্তানি করে থাকে। সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই জেলা থেকে ৩ হাজার ১২৬ টন শুঁটকি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে হয়েছিল ৩ হাজার ৩৮ টন। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ২ হাজার ২৬৩ টন। তার আগের বছর রপ্তানি হয়েছিল ৩ হাজার ৩৩৫ টন শুঁটকি, যা থেকে আয় হয়েছিল ৫৪ লাখ ৭০ হাজার ১২২ মার্কিন ডলার।
মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ফারহানা লাভলী বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ভারতে সবচেয়ে বেশি শুঁটকি রপ্তানি হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির সেভেন সিস্টারে বাংলাদেশি শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চট্টগ্রামের শুঁটকির চাহিদা আছে। এই চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এখন যে পরিমাণ রপ্তানি হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। এ খাত থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
শুঁটকি রপ্তানিকারক শোয়েব ট্রেডের স্বত্বাধিকারী সুজন চৌধুরী বলেছেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ চালান ভারতে গেছে। মাছের মধ্যে মিঠাপানির পুঁটির শুঁটকি বেশি রপ্তানি করেছি। ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এ মাছের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে চালান গেছে। তবে তা খুবই কম। দেশের বিভিন্ন হাওরাঞ্চল থেকে মিঠাপানির মাছ সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষ করে সিলেট, ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে মাছ সংগ্রহ করতে হয়।’
শুঁটকি রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত চট্টগ্রামের বিডিসি ফুড লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘শুঁটকির রপ্তানি প্রতিবছর বাড়ছে। এ খাত থেকে সরকার বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। কাঁচা মাছের দাম বেশি হওয়ায় শুঁটকির দামও বেশি।’
বাংলাদেশ নন-প্যাকার ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুব রানা বলেন, ‘যেসব দেশে বাঙালি রয়েছে সেখানে দেশীয় পণ্যের চাহিদা বেশি। এই তালিকা থেকে বাদ যায়নি শুঁটকিও। দেশীয় শুঁটকি পেলে তারা বেশি খুশি হন। দেশের বাজারেও শুঁটকির চাহিদা রয়েছে। তাই দিন দিন শুঁটকির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দেওয়া দাবি করেন তিনি।
এদিকে চট্টগ্রামের আসাদগঞ্জের শুঁটকির আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া শুঁটকির ৮০ শতাংশই এই বাজার থেকে সরবরাহ করা হয়। আস্ত শুঁটকির পাশাপাশি রপ্তানি হয় মাছের বিভিন্ন অংশবিশেষ এবং কাটা শুঁটকিও। এর মধ্যে রয়েছে লেজ, পাখনা ও অন্ত্র। এসব শুঁটকি আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।
আসাদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান হায়দার বলেন, ‘গুণগত মান ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের শুঁটকির চাহিদা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাড়ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে কাঁচা মাছের দাম বেড়েছে। আর এর প্রভাবে বেড়েছে শুঁটকির দামও। দেশের বাজারে দাম কম থাকলে হয়তো পণ্যটি আরও বেশি রপ্তানি হতো।