ঢাকা | বঙ্গাব্দ

বিএনপির ফ্রন্টলাইন নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাভোগীরা প্রভাবশালী হয়ে উঠছে!

  • আপলোড তারিখঃ 14-08-2025 ইং
বিএনপির ফ্রন্টলাইন নিষ্ক্রিয়, বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাভোগীরা প্রভাবশালী হয়ে উঠছে! ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

গণ-অভ্যুত্থানের আগে তাদের খবর ছিল না। বিগত দেড় দশক ছিলেন নিষ্ক্রিয়, করেছেন আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা-বাণিজ্য। অনেকে দীর্ঘদিন ছিলেন বিদেশে। কেউ কেউ আবার ওয়ান-ইলেভেনের কিংস পার্টিখ্যাত পিডিপি’র রাজনীতিও করেছেন। এসব বিতর্কিত ব্যক্তি ও সুবিধাভোগী এখন দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। তারা এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন, বনে গেছেন বিএনপির সক্রিয় নেতা। থাকছেন মিছিল-মিটিংয়ের ফ্রন্টলাইনে। তাদের দাপটে স্থান হচ্ছে না বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সাড়ে ১৫ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নেওয়া এবং জেল-খাটা নেতা-কর্মীরা।


বিএনপিতে হঠাৎ সামনে আসা এসব নেতা-কর্মী জড়িয়েও পড়েছেন নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। কমিটি গঠনে অনিয়ম-দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখল-বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। উপজেলা, পৌর, থানা এবং ইউনিয়ন কমিটিতে তারা আওয়ামী লীগের দোসরদের সুযোগ করে দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে করছেন মিছিল-মিটিং। তাদের এই কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ তৃণমূল বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। 


ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুখের অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে নয়াপল্টন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। গত ৪ আগস্ট জমা দেওয়া এ লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ফারুখকে আহ্বায়ক করে ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট উপজেলা বিএনপি কমিটি গঠিত হয়। কিন্তু তিনি ২০২২ সালের আগে কখনো বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। ফারুখের সঙ্গে থাকা নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজিতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। গত তিন বছরে পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে একটি সভা করতে পারেননি। ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি দিতে পারেননি।


অভিযোগে বলা হয়, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা রাতে ভোট কাটার জন্য সহযোগিতা করেছে, সেই সব দোসরকে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন আখতারুল আলম ফারুখ। যারা আওয়ামী লীগের অবৈধ এমপিকে ফুল দিয়ে বরণ করেছেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করছেন। গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত উম্মে কুলছুমকে ১৩ নম্বর ভবানীপুর ইউনিয়ন মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ দিয়েছেন। এতে ফুলবাড়িয়া বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 


ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে জমা দেওয়া অভিযোগপত্রে ফুলবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সদস্য মো. সাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা বাস্তবায়নে আওয়ামী দোসররা যাতে বিএনপিতে স্থান না পায়, তাদের ব্যাপারে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, আওয়ামী দোসরদের প্রতিষ্ঠিত করার জন্য আখতারুল আলম ফারুখ উঠে-পড়ে লেগেছেন। তিনি অতীতে কখনো বিএনপির রাজনীতি করেননি। তাকে নিয়ে নেতা-কর্মীরা অসন্তুষ্ট। বিগত সময়ে তৃণমূলের রাজপথে থাকা নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন এখন সময়ের দাবি।


জানা গেছে, একসময়ের কিংস পার্টি পিডিপির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন আখতারুল আলম ফারুখ।


২০০৭ সালে ১/১১-এর সময়ে ড. ফেরদৌস কোরেশীর নেতৃত্বে পিডিপি গঠন করা হয়। ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া উপজেলার দায়িত্ব পান বর্তমান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আখতারুল আলম ফারুখ। একই সময়ে তিনি পিডিপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও ময়মনসিংহ জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম বাজারে ধানের আড়তের কাছে পিডিপি উপজেলা শাখার অস্থায়ী কার্যালয় গড়ে উঠেছিল তারই (আখতারুল আলম ফারুখ) নেতৃত্বে। শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নূরে আলম সিদ্দিকীর সন্তানদের সঙ্গে (ডরিন পাওয়ার) কুইক রেন্টাল ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলেন তিনি।


তৃণমূলের একাধিক নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ৫ আগস্ট না এলে বোঝা যেত না যে দেশে বিএনপির এত নেতা-কর্মী আছেন। অথচ আন্দোলন চলাকালে অনেককেই হারিকেন দিয়ে খুঁজে পাওয়া যেত না। ৫ আগস্টের এক দিন আগেও যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন, তারাই এখন বিএনপির শীর্ষ নেতার কাছের লোক হয়ে গেছেন।


২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন এম এ মুহিত। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তেমন সক্রিয় ছিলেন না। ২০১৮ সালের পর ছিলেন বিদেশে। কিন্তু ৫ আগস্টের পর দেশে ফিরে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। একইভাবে ওয়াসিক ইকবাল মোহর নামের একজন সরকারি কর্মকর্তা, দীর্ঘদিন ছিলেন বিদেশে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি গোলাম সরওয়ার ঢাকায় রাজনীতি করলেও এলাকায় ছিলেন না। তারা এখন আগামী নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী। তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পর আসা ‘হঠাৎ নেতা’দের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সামনে অশনিসংকেত। কমিটি পদায়নের ক্ষেত্রেও ৫ আগস্টের আগের অবদান মূল্যায়নের দাবি তাদের। 


সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা বিএনপির নেতা শফিকুল ইসলাম ছালাম। অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে বিএনপির প্রতিটি আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি। বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকতে হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনের মহাসমাবেশে গুলিবিদ্ধ হই। পরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও আওয়ামী লীগের হামলার শিকার হই। ২০১৮ সালে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার দিনেও শফিউল বাবু ভাইসহ টিয়ারশেলে আহত হই। অথচ বিএনপির দুর্দিনে যারা বিদেশে ছিলেন বা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, তারাই এখন বড় নেতা। আশা করি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাঠের পরীক্ষিত নেতাদের যথার্থ মূল্যায়ন করবেন। 


বিদেশফেরত ও বিতর্কিতরা এখন মনোনয়নপ্রত্যাশী


বিএনপির আলোচিত ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী অভ্যুত্থানের পর ১০ আগস্ট দেশে ফেরেন। তার চাচাতো ভাই টানা চারবারের আওয়ামী লীগের এমপি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। ২০০৮ সাল থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা তার নিয়ন্ত্রণে ছিল। গণ-অভ্যুত্থানের পর ফজলে চৌধুরী আত্মগোপনে গেলে রাউজানের নিয়ন্ত্রণ নেন গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। উঠেছেন গহিরা গ্রামে ফজলে চৌধুরীর বাড়িতে। ছাত্র-জনতার ভাঙচুর ও হামলা থেকেও বাড়িটি রক্ষা করেন গিয়াস চৌধুরী। বর্তমানে ফজলে চৌধুরীর অর্ধশতাধিক ক্যাডার এখন গিয়াস চৌধুরীর ডেরায়। চাঁদাবাজি ও দখল-বাণিজ্যসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে নাম এসেছে তার অনুসারীদের। সর্বশেষ রাউজানে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদ স্থগিত করেছে বিএনপি। এর আগেও চাঁদাবাজি ও দখল-বাণিজ্যের কারণে গিয়াস কাদেরকে শোকজ করেছিল বিএনপি। স্থানীয়রা বলছেন, চট্টগ্রামের ১৫টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অশান্ত রাউজান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর শুধু রাউজানে খুন হয়েছেন ১৫ জন। এর মধ্যে রয়েছে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যার সবগুলোই প্রতিহিংসামূলক। 


অন্যদিকে দীর্ঘ ১৭ বছর পর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন বিএনপির একসময়ের প্রভাবশালী নেতা সাবেক এমপি আলী আসগর লবী। তিনি ২০১৯ সালে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। কয়েক বছর ছিলেন বিদেশে। বর্তমানে খুলনা-৫ আসন থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন আলী আসগর লবী। এ নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে বিগত সাড়ে ১৫ বছর ফ্যাসিবাদের নির্যাতন ও জুলুম সহ্য করে যারা বিএনপির পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন তারা এখন ক্ষুব্ধ। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে সমালোচনার ঝড়। অনেকে বলছেন, বিএনপিতে আগে মধু ছিল না, তাই পদত্যাগ করেছিলেন। মধুর লোভে আবার দলে এসেছেন।


খুলনা জেলা যুবদলের সভাপতি ইবাদুল হক রুবায়েদ বলেন, ‘শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে ধারণ করে রাজনীতি করি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যখন যা বলেছেন, জীবন বাজি রেখে কাজ করেছি। বিপদে-আপদে বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছি। আশা করি তৃণমূলে কাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি, তা বিচার করবে বিএনপির হাইকমান্ড।’ তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানসহ প্রতিটি আন্দোলনে সক্রিয় ছিলাম। বিগত সময়ে দুবার গুম হয়েছি। আমার বিরুদ্ধে খুলনায় মামলার সংখ্যা সবার থেকে বেশি।’


অন্যদিকে বাগেরহাট-৪ আসনের মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজির জন্য নিজস্ব বলয় গড়ে তুলেছেন জেলা বিএনপির সদস্য খায়রুজ্জামান শিপন ওরফে শিপন কাজী। ক্ষমতার পালাবদলের পর শত শত বিঘা মাছের ঘের দখলের অভিযোগ রয়েছে শিপন কাজী ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন একাধিক ভুক্তভোগী। সম্প্রতি চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগে শিপন কাজীকে দ্বিতীয় দফায় শোকজ করেছে বিএনপি। 


স্থানীয় নেতা-কর্মীরা জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর গত বছরের ১২ আগস্ট দেশে ফিরেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও দলে টেনেছেন তিনি। এমনকি আওয়ামী লীগের প্রয়াত এমপি মোজাম্মেল হোসেনের সঙ্গে শিপন কাজীর সখ্য ছিল। এখন তিনিও মনোনয়নপ্রত্যাশী।


আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় ব্যবসা করা স্মার্ট টেকনোলজির চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামকে এখন লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের বিএনপির কর্মসূচিতে দেখা যায়। অথচ তিনি শেখ হাসিনার আশীর্বাদে আওয়ামী লীগের পুরো সময়টাই একচেটিয়া ব্যবসা করেছেন। ২০২৪-এ শেখ হাসিনার সঙ্গে চীন সফরেও গেছেন। এ ছাড়া এইচ টি ইমাম, মোস্তাফা জব্বার, জুনায়েদ পলক এবং নাফিসা কামালের সঙ্গেও ছিল বিশেষ যোগাযোগ। এদের হাত করে পদ্মা সেতু প্রকল্প, আইসিটি ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের নানা প্রকল্পের কাজ হাতিয়ে নিয়েছিলেন জহিরুল। ৮০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদকে মামলা রয়েছে। স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা জানান, জহিরুল ইসলাম পদ্মা সেতু উদ্বোধনে শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার ছাপিয়ে ছিলেন। আর এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি দিয়ে পোস্টার করছেন। যারা দলে তাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছেন নেতা-কর্মীরা। 


শুধু এরা নন, সারা দেশে মহানগর-জেলা-উপজেলায় এখন বিগত সময়ের আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী এবং তাদের সঙ্গে আঁতাত করে চলা বিএনপি নেতাদের দাপট। মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সাবেক মেয়র মহসীন মিয়া মধু। সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদের সুবিধাভোগী ছিলেন। ২০২১ সালের পৌরসভা নির্বাচনে আব্দুস শহীদের আশীর্বাদে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক এম ইদ্রিছ আলী। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আব্দুস শহীদের সঙ্গে সখ্য থাকায় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক পদ বাগিয়ে নেওয়াসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন। 


গত শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান পাওয়াদের ৪৬ জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি জেলা-উপজেলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের লোকজনের অনুপ্রবেশের খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে আসছে।

তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিএনপিতে ভিড়তে শুরু করেছেন সুসময়ের কোকিলরা। বড় বড় নেতার প্রটোকল দেওয়ার সময় সামনের কাতারে চলে আসছেন তারা। অথচ রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের ঠাঁই হচ্ছে ব্যাক বেঞ্চে। 


যা বলছে বিএনপি


দলীয় সূত্রমতে, ‘হাইব্রিড’ ও অনুপ্রবেশকারীদের বিষয়ে পটপরিবর্তনের শুরু থেকেই কঠোর পদক্ষেপে বিএনপি হাইকমান্ড। তৃণমূলে নির্দেশনা দিয়ে হাইব্রিডদের দলে জায়গা না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। যাদের শেল্টারে নব্য হাইব্রিডরা বিএনপিতে প্রবেশ করছেন, তাদের খুঁজে বের করা হচ্ছে। দোষীদের লাল তালিকায় রাখা হচ্ছে। আগামীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

সূত্র আরও জানায়, সারা দেশে বিভিন্ন পর্যায়ের বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তূপ পড়েছে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দখল, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, দলীয় নির্দেশ অমান্যসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগে বিগত এক বছরে চার হাজারের বেশি নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি। 


এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু খবরের কাগজকে বলেন, ৫ আগস্টের পর অনেকে বিএনপিতে ভেড়ার চেষ্টা করছেন। সুযোগ বুঝে অনেকে দলে ভিড়ছেন। নিষ্ক্রিয় বা নব্য হাইব্রিড নেতা-কর্মীদের সমস্যা কমবেশি সব নেতাকেই মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বিগত সময়ে যারা আন্দোলনে রাজপথে ছিলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, হামলা-মামলার শিকার হয়েছেন, তাদের জন্য এটা খুবই কষ্টের। তবে আন্দোলন-সংগ্রামে যারা রাজপথে ছিলেন, তাদের মূল্যায়ন করবে হাইকমান্ড।


বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স খবরের কাগজকে বলেন, সবার মনোবল এক নয়। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের অত্যাচার-নির্যাতন অনেকে সহ্য করতে পেরেছেন, আবার অনেকে চুপ ছিলেন। ৫ আগস্টের পর এখন অনেকে সক্রিয় হয়েছেন। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা আঁতাত করে চলেছেন বা নিষ্ক্রিয় ছিলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা যারা ভঙ্গ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হচ্ছে, তাদের বহিষ্কার করা হচ্ছে।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে