২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশে একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর আগুনে দগ্ধ হন কয়েকজন। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থলে ছুটে যান শিক্ষক, অভিভাবক, পথচারীরা। তখন অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে ভাবছিলেন—এমন দগ্ধ অবস্থা থেকে আরাম পেতে হলে কি বরফ দেওয়া উচিত? অনেকে হয়তো খোঁজ করছিলেন ঠান্ডা পানি কিংবা আইস কিউব। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে, এটা হতে পারে ভয়াবহ ভুল।
অগ্নিদগ্ধ (পোড়া) হলেই বরফ বা খুব ঠান্ডা পানি দিলে আরাম মিলবে—এই ধারণা অনেকেরই। কিন্তু বাস্তবে এটি ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। বরফ বা বরফমিশ্রিত পানি ব্যবহার করলে ক্ষত আরও বাড়তে পারে, এমনকি হতে পারে প্রাণঘাতী জটিলতাও।
কেন অগ্নিদগ্ধ হলে বরফ দেওয়া ঠিক নয়?
টিস্যু ড্যামেজ বাড়ে:
বরফ বা অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি চামড়ার নিচের রক্তনালীগুলো সংকুচিত করে দেয়, ফলে ক্ষতস্থানে রক্তপ্রবাহ কমে যায়। এতে আশপাশের কোষগুলো আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দগ্ধ জায়গায় টিস্যু ড্যামেজ আরও বাড়তে পারে।
হাইপোথারমিয়ার ঝুঁকি:
বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ বা যারা বড় অংশে দগ্ধ হয়েছেন—তাদের শরীর অতিরিক্ত ঠান্ডায় তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। বরফ দিলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বিপজ্জনকভাবে কমে যেতে পারে, যাকে বলে হাইপোথারমিয়া।
ব্যথা আরও বাড়তে পারে:
অনেকেই ভাবেন ঠান্ডা দিলে আরাম পাওয়া যাবে, কিন্তু বরফে স্পর্শ করলে অনেক সময় স্নায়ু আরও সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। এতে অস্বস্তি বা ব্যথা আরও তীব্র হয়।
ভুল চিকিৎসায় সময় নষ্ট:
অনেকে বরফ বা ঠান্ডা পানি লাগিয়ে সময় পার করে দেন, অথচ জরুরি চিকিৎসা দরকার হয়। এই দেরির কারণে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, এমনকি ক্ষত জটিল রূপ নিতে পারে।
তাহলে কী করবেন?
দগ্ধ হলে সবচেয়ে ভালো হলো সাধারণ বা হালকা ঠান্ডা পানি (১৫–২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দিয়ে ক্ষতস্থান ১০–১৫ মিনিট ধুয়ে দেওয়া।
বরফ বা বরফমিশ্রিত পানি একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়।
ক্ষতস্থান পরিষ্কার ও নরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিন, যেন বাইরের ধুলো-ময়লা না লাগে।
ব্যথা কমাতে প্রয়োজনে প্যারাসিটামল নেওয়া যেতে পারে।
যদি পোড়া গভীর হয় বা বড় এলাকা জুড়ে থাকে, তবে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।