ঢাকা | বঙ্গাব্দ

সেন্টমার্টিন হয়ে বাড়ছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ

  • আপলোড তারিখঃ 26-07-2025 ইং
সেন্টমার্টিন হয়ে বাড়ছে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ছবির ক্যাপশন: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক।



মিয়ানমারের চলমান গৃহযুদ্ধ এবং কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢোকার প্রবণতা আবারও নতুন করে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার সকালে মিয়ানমার থেকে ২০ জন রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিন দ্বীপে অনুপ্রবেশ করেছে বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ভবিষ্যতে এই প্রবণতা আরও বাড়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করছেন সীমান্ত বিশ্লেষকরা।


টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন জানান, আজ সকালে একটি নৌকায় করে ২০ জন রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিনে প্রবেশ করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাটি যাচাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছে।



স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে একটি কাঠের নৌকায় করে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়। বৈরী আবহাওয়ায় মাঝ সমুদ্রে দিক হারিয়ে তারা প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের উত্তর-পশ্চিম সৈকতে এসে নামে। নৌকায় থাকা ২০ জনের মধ্যে ১৬ জন পুরুষ, ৩জন নারী ও একটি শিশু রয়েছে।


স্থানীয় বাসিন্দা মুহাম্মদ সোলেইমান বলেন, ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টির মধ্যে নৌকাটি ভেসে আসে। তারা নৌকা থেকে নেমে দ্বীপে ঢুকে পড়ে। পরে বিজিবি এসে তাদের হেফাজতে নেয়। জানা গেছে, তাদের প্রাথমিকভাবে দ্বীপের একটি হোটেলে রাখা হয়েছে এবং পরিচয় যাচাই শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।


জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, ২০২৩ সালের শুরুর দিক থেকে চলতি বছর (২০২৫) পর্যন্ত দেড় লাখের বেশি নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অধিকাংশই এসেছে নাফ নদী, টেকনাফ উপকূল ও এখন সাম্প্রতিক সময়ে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্টমার্টিন দ্বীপ হয়ে। সীমান্ত সূত্রগুলো বলছে, এই সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ, মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে প্রতিনিয়ত।


২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তীব্র সংঘাতে জড়ায় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (AA)। টানা ১১ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় আরাকান আর্মি। সরকারি বাহিনীর ক্যাম্প দখল, কারাগার হামলা ও রোহিঙ্গা বন্দিদের মুক্তি দেওয়া- এসব ঘটনায় বহু রোহিঙ্গা পালিয়ে পড়ছে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে। অনেকেই এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে মরিয়া।


স্থানীয় সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই পূর্বে জাতিগত সহিংসতায় গ্রেফতার হয়ে কারাবন্দি ছিলেন। রাখাইন রাজ্যে সেনাশিবির ও কারাগার দখলের পর অনেককে মুক্ত করে দেয় আরাকান আর্মি। মুক্তি পাওয়ার পর এই মানুষগুলো মিয়ানমারে থাকার কোনো নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে সাগরপথে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছেন।


বিশ্লেষকদের মতে, বারবার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুধু মানবিক সমস্যা নয়, এটি জাতীয় নিরাপত্তা এবং মানব পাচার প্রতিরোধ ক্ষেত্রেও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে- রাখাইনের সংঘাতে ভেঙে পড়া প্রশাসনিক কাঠামোর সুযোগে অস্ত্রধারী চক্র, মাদক ব্যবসায়ী এবং মানবপাচারকারী গোষ্ঠী এই অনুপ্রবেশের সুযোগ নিতে পারে।


এ ঘটনায় এখনো বিজিবি, কোস্ট গার্ড বা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানদের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে।


সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের খবর পেয়েছি। বিষয়টি বিস্তারিত প্রশাসন দেখছে।


রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধে সীমান্তে নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি সমুদ্রপথেও টহল জোরদার করতে হবে। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা এবং প্রত্যাবাসনের বিষয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখা এখন সময়ের দাবি।


বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের গ্রহণ নয়, সুরক্ষিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে একটি সুদূরপ্রসারী কৌশল গ্রহণ করা জরুরি।


নিউজটি পোস্ট করেছেনঃ focusullapara

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
notebook

প্রস্তাবিত জুলাই সনদে নিরীক্ষা ও হিসাব বিভাগের পৃথকীকরণ বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে